কুরআন-হাদীসের আলোকে কিশোর গল্প : প্রাসাদের মালিক


 প্রাসাদের মালিক

- মোশাররফ হোসেন খান


একটি অনারব মুসলিম পরিবার।

প্রথম দিকে তারা ছিলো খুবই সরল এবং সুখী ।

হঠাৎ করে স্বামী ইন্তেকাল করলো। সেই ছিলো পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি । তার আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবারটির জীবনে নেমে এলো অন্ধকারের কালো মেঘ। ভীষণ অভাব-অনটনের মধ্যে পড়ে গেলো তার স্ত্রী । স্ত্রীর সাথে আছে তার আরও এতিম ছেলেমেয়ে।

অভাবের সুযোগে পড়শিরা তাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করতো মহিলাটি আর কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে বাধ্য হয়ে এতিম ছেলে নিয়ে একদিন পথে নামলো ।

প্রচণ্ড শীত। শীতের প্রকোপে কেউ ঘর থেকে বাইরে নামতে সাহসও করে না ।

সেই কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে মহিলাটি তার অসহায় ছেলেমেয়ে নিয়ে বহু কষ্টে পৌঁছে গেলো বলখে ।

সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা একটি শহর। এদিকে তার ছেলেমেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কেবলই ছটফট করছে। বাচ্চাদের চোখে পানি দেখে মহিলাটি আর স্থির থাকতে পারলো না। হাজার হোক মায়ের প্রাণ!

সে তার ছেলেমেয়েকে একটি পরিত্যক্ত মসজিদে রেখে বেরিয়ে পড়লো খাবারের খোঁজে।

মহিলাটি প্রথমে গেলো বলখ শহরের মেয়রের কাছে । তিনি ছিলেন একজন মুসলমান ।

মহিলাটি মেয়রের কাছে গিয়ে বিনয়ের সাথে বললো, আমি একজন বিধবা মুসলিম নারী। আমার কয়েকটি এতিম ছেলেমেয়ে আছে। তাদেরকে 

আপনার শহরের একটি পরিত্যক্ত মসজিদে রেখে এসেছি। তারা খুব ক্ষুধার্ত। ক্ষুধার জ্বালায় তারা কেবলই কান্নাকাটি করছে। আমি তাদের কান্না আর সইতে পারছিনে। আজকের রাতের জন্যে তাদের মুখে দেবার মতো কিছু খাবার দিতে অনুরোধ করছি।

মেয়র বললেন, আগে প্রমাণ করো যে, তুমি একজন সতী-সাধবী মুসলিম নারী ।

মহিলাটি জবাবে বললো, দেখুন! আমি বিদেশিনী। এই শহরের কেউ আমাকে চেনে না । কিভাবে আমি প্রমাণ দেবো?

মেয়র বললেন, তাহলে আমি তোমাকে কোনো উপকার বা সাহায্য করতে পারবো না ।

মহিলাটি তার কাছ থেকে ঘৃণা আর উপেক্ষা নিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলো । এবার সে গেলো একজন অগ্নি উপাসকের নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে। তার কাছে গিয়ে তার এবং বাচ্চাদের ক্ষুধা ও অসহায়ত্বের কথা খুলে বললো । মুসলিম মেয়রের আচরণের কথাও তাকে জানালো ।

সব শুনে অগ্নি উপাসকের সেই নিরাপত্তা কর্মকর্তার হৃদয়টা ব্যথায় ভারী হয়ে উঠলো। বললেন, আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি বাড়ির ভেতর থেকে আসছি।

একটু পরে তিনি ভেতর থেকে একজন মহিলাকে সাথে করে আনলেন । বললেন, আমি একে পাঠাচ্ছি। আপনি বাচ্চাদের নিয়ে আসুন। শুধু খাবার নয়, আপনারা রাতে আমার বাসায় থাকবেন।

তার কথা মতো মহিলাটি তার বাচ্চাদেরকে নিয়ে রাতে সেই বাড়িতে আশ্রয় নিলো। তাদেরকে পেট ভরে, তৃপ্তির সাথে আহার করালেন। পরম আদর ও যত্নে এতিম বাচ্চাদেরকে খুব সুন্দর পোশাক পরিয়ে দিলেন। তারপর তাদেরকে খুব সম্মানের সাথে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন । গভীর রাত ৷

সবাই ঘুমে অচেতন

এ সময়ে মুসলিম মেয়র স্বপ্নে দেখলেন, কিয়ামত শুরু হয়ে গেছে। তিনি দেখলেন, সবুজ জমরুদ পাথরের তৈরি বিশাল প্রাসাদের মতো একটি ভবনের সামনে পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং রাসূল (সা)।

মেয়র জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল (সা)! এই প্রাসাদটি কার? রাসূল (সা) বললেন, আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী একজন মুসলিম নেতার মেয়র বললো, , আমি তো আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী একজন মুসলিম নেতা । রাসূল (সা) বললেন, আগে প্রমাণ দাও যে, তুমি তাওহিদবাদী একজন সত্যিকার মুসলমান!

রাসূলের (সা) কথা শুনে মেয়র ঘাবড়ে গেলেন ।

রাসূল (সা) আবার বললেন, আজ রাতে একজন বিধবা যখন নিজেকে মুসলমান মহিলা বলে পরিচয় দিয়ে সাহায্য চেয়েছিলো, তুমি তাকে বলেছিলে, আগে প্রমাণ দাও যে তুমি মুসলমান। তেমনি তোমাকেও এখন প্রমাণ দিতে হবে যে, তুমি একজন মুসলমান ।

স্বপ্নে এইটুকু দেখার পর মেয়রের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো ।

তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে নিজেই অস্থির হয়ে পড়লেন। বুঝতে পারলেন, ঐ মুসলিম বিধবাকে সাহায্য না করে তিনি খুব অন্যায় করেছেন । তিনি সাথে সাথে লোক পাঠিয়ে চারদিকে মহিলাটির খোঁজ নিলেন। অবশেষে তিনি জানতে পারলেন যে, মহিলাটি তার এতিম সন্তানদেরকে নিয়ে অগ্নি উপাসকের নিরাপত্তা কর্মকর্তার বাড়িতে আছে ।

মেয়র নিজে গেলেন সেখানে। বললেন, যে মহিলা তার ছেলেমেয়েসহ তোমার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, তাকে পাঠাও ।

নিরাপত্তা কর্মকর্তা জবাবে বললেন, আমি তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে অপরিসীম কল্যাণ ও বরকত লাভ করেছি। সুতরাং তাকে আমি যেতে দেবো না ।

মেয়র বললেন, আমি তোমাকে এক হাজার দীনার দিচ্ছি। তার বিনিময়ে তুমি তাদেরকে দাও ।

নিরাপত্তা কর্মকর্তা একটু মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন, অসম্ভব ! কোনো কিছুর বিনিময়েও আমি তাদেরকে আপনাকে দেবো না। কারণ, রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছি যে, আমার জন্যে একটি বিশাল প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছে । এই স্বপ্ন দেখার পর আমরা সপরিবারে এই মুসলিম বিধবা মহিলার কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছি। এখন আপনিই বলুন, যাদের জন্যে আমি এতো কল্যাণ লাভ করেছি, তাদেরকে আপনার হাতে কেমন করে, কিভাবে তুলে দিতে পারি? না! আমি তা কক্ষনো পারবো না। কারণ, তাদের জন্যেই আমি কাল কিয়ামতের দিনে হতে পারবো সেই বিশাল প্রাসাদের মালিক


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url