ইসলামের পাঁচ কালেমা: পরিচিতি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ।

ইসলাম, কালেমা, ইসলামের কালেমা, পাঁচ কালেমা

কালেমা কি ?

ইসলাম পালনের জন্য প্রধানত দুটি বিষয় রয়েছে। একটি হলো ঈমান বা বিশ্বাস। আর অপরটি হলো বিশ্বাস অনুযায়ী আমল বা কর্ম। ইসলামে বিশ্বাসের বিষয়গুলোকে আরবী বাক্যে সংক্ষিপ্ত, সুন্দর ও গুছানোভাবে যে সকল বাক্য দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলোকে কালিমা বলে

ইসলামের কালিমা কয়টি?

ইসলামে প্রধাণত ৫টি কালেমা ধরা হয়। সেগুলো আরবীতে, বাংলা উচ্চারণ এবং অনুবাদসহ নিম্নে তুলে ধরা হলো-

কালিমায়ে তায়্যিবাহ 

لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ 

উচ্চারণ :  লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্

অর্থ : আল্লাহ ব্যতিত আর কোন মা'বুদ নেই। মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।

কালিমায়ে শাহাদাত

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ 

উচ্চারণ :  আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। 

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মা'বুদ নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

কালিমায়ে তামজীদ

سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ للهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُوَلا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ

উচ্চারণ : সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল্ হাম্‌দুলিল্লা-হি ওলা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওল্লা-হু আকবার ওলা হাওলা ওলা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লা-হিল আলিয়্যিল আজীম । 

অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা এবং তাঁর প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আল্লাহ মহান। মহান আল্লাহ ব্যতিত (গুনাহ মাফকারী) কোন শক্তি ও সামর্থ নেই।


কালিমায়ে তাওহীদ


لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ حَى لَا يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ 

উচ্চারণ: লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওহ্দাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুল্‌কু ওলাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইউমিতু ও হুয়া হাইউন লা ইয়ামূতু বিয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুয়া আ'লা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।

অর্থ: আল্লাহ ব্যতিত আর কোন মা'বুদ নাই; তিনি একক। তাঁর কোন অংশীদার নাই। সমগ্র রাজত্ব এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। সকল কল্যাণ একমাত্র তাঁর হাতেই রয়েছে। তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন। তিনি চীরঞ্জীব তাঁর কোনো মৃত্যু নেই এবং তিনি সর্বশক্তিমান ।

ঈমানে মুজমাল

آمَنْتُ بِاللهِ كَمَا هُوَ بِأَسْمَائِهِ وَصِفَاتِهِ وَقَبِلْتُ جَمِيْعًا أَحْكَامِهِ وَأَرْكَانِهِ 

উচ্চারণ: আ-মানতু বিল্লা-হি কামা-হুয়া বিআসমা-ইহী ওয়া সিফা-তিহী ওয়া ক্বাবিলতু জামী-আ আহকা-মিহী ওয়া আরকা-নিহী।

অর্থ: আমি আল্লাহ তা'আলার উপর ঈমান আনলাম। তিনি যেমন, তার নামসমূহ ও তাঁর গুণাবলী সহকারে এবং আমি গ্রহণ করেছি তাঁর সমস্ত বিধান ও আরকানকে।

ঈমানে মুফাসসাল


أمَنتُ بِاللهِ وَمَلَيكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِهِوَشَرِّهِ مِنَ اللهِ تَعَالَى وَالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ

উচ্চারণ :  আ-মানতু বিল্লা-হি ওয়া মালা-ইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রাসূলিহী ওয়াল ইয়াওমিল আ-খিরী, ওয়াল ক্বাদরি খায়রিহী ওয়া শাররিহী মিনাল্লা-হি তাআলা ওয়াল বা'সি বা'দাল মাওত।

অর্থ: আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর উপর, তাঁর ফিরিশতাদের উপর, তাঁর আসমানী কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিবসের উপর আর এর উপর যে, অদৃষ্টের ভাল-মন্দ আল্লাহ তা'আলার তরফ হতে এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর।

ইসলামে যেসকল বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হয় 

আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলামের দু'টি অংশ, একটি হল মূল, আরেকটি মূল থেকে উদ্‌গত শাখা প্রশাখা। প্রথমটি অর্থাৎ ইসলামের মূল অংশের নাম ঈমান (আক্বীদা)। আর দ্বিতীয়টি হল আমল বা সৎকাজ। মূল ছাড়া যেমন গাছ হতে পারে না তেমনি সঠিক আক্বীদা ছাড়া যে কোন আমল অর্থহীন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

“যে ব্যক্তি ঈমানের বিষয় অবিশ্বাস করে তার সমস্ত আমল বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” (সূরা মায়েদা : ৫)

মুসলমানের জন্য নিম্নবর্ণিত সাতটি বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে- 

১. আল্লাহ তায়ালা 
২. ফেরেশতাগণ 
৩. আসমানী কিতাবসমূহ 
৪. নবী ও রাসূলগণ 
৫. কিয়ামত দিবস 
৬. তাকদীরের ভালমন্দ 
৭. মৃত্যুর পর পুনরুত্থান। 
এগুলোর কোন একটি কম হলে তাকে ঈমানদার বলা যাবে না ।

“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রাসূল (সা.) ও তাঁর কিতাবের উপর যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রাসূলের উপর এবং সে সমস্ত কিতাবের উপর যেগুলো ইতিপূর্বে নাযিল করা হয়েছিলো। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর এবং পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না; সে ঈমান থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে বহুদূরে চলে যবে।” (সূরা নিসা : ১৩৬)

আল্লাহ আমাদের যথাযথভাবে ঈমান আনার বা বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দিন। আমীন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url