ইলমের পরিচয়, গুরুত্ব ও ফজিলত।


দীনী পরিভাষা এবং কুরআন ও হাদীসের ভাষায় ইল্‌ম দ্বারা উদ্দেশ্য সেই ইল্‌ম যা নবী (আ) গণের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা'আলার নিকট হতে বান্দাদের হিদায়াতের জন্য এসেছে। আল্লাহর কোন নবী ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনে এবং তাঁকে নবী ও রাসূল মেনে নেওয়ার পর মানুষের ওপর সর্ব প্রথম অবশ্য কতর্ব্য এটা বর্তায় যে, সে জানবে এবং জানার চেষ্টা করবে, এ নবী আমার জন্য কী শিক্ষা ও উপদেশাবলি নিয়ে এসেছেন? 

কি করা আর না করা আমার উচিত? ইলমের ওপর দীনের যাবতীয় ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। এ জন্য ইলম শিক্ষা করা এবং অন্যকে শিক্ষাদান করা ঈমানের পর সর্বপ্রথম অপরিহার্য কর্তব্য।


এই শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া মৌখিক কথা-বার্তা এবং পর্যবেক্ষণ দ্বারাও হতে পারে। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ও তাঁর পরবর্তী নিকটবর্তী যুগে ছিল। সাহাবা কিরাম (রা)-এর গোটা ইলম তাই ছিল, যা তাঁদের অর্জিত হয়েছিল স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীসমূহ শুনে, তাঁর কার্যাবলি পর্যবেক্ষণ করে, কিংবা এরূপে তাঁর নিকট হতে কোনভাবে উপকৃত হওয়া অন্য সাহাবা কিরাম (রা) থেকে। এভাবে অধিকাংশ তাবিঈনের ইল্‌মও তাই ছিল যা সাহাবা কিরাম-এর সাহচর্য ও তাঁদের থেকে শ্রবণের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল। 

আর এ ইল্ম লিখা-পড়া ও গ্রন্থাদির মাধ্যমেও অর্জিত হতে পারে। যেমন, পরবর্তী যুগসমূহে এর সাধারণ অবলম্বন ছিল গ্রন্থাদি পঠন-পাঠন, যা এখনো প্রচলিত আছে।


রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় বাণীসমূহে আবশ্যকীয় দীনী ইলম অর্জন করা প্রত্যেক সেই ব্যক্তির জন্য অবশ্য কর্তব্য বলেছেন, যে ব্যক্তি তাঁকে আল্লাহর নবী স্বীকার করে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, আল্লাহর দীন ইসলাম গ্রহণ করবে। 

এই ইলম অর্জনে কষ্ট ও পরিশ্রমকে তিনি 'আল্লাহর পথে' এক প্রকার জিহাদ ও আল্লাহর নৈকট্যলাভের অতি বিশেষ ওসীলা বলেছেন। আর এ বিষয়ে শৈথিল্য ও অবহেলাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ স্থির করেছেন।


এ ইল্‌ম নবী (আ) গণের, বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মূল্যবান ত্যাজ্যবিত্ত, এবং গোটা জগতের সর্বাধিক প্রিয় ও মূল্যবান সম্পদ। আর যে সব সৌভাগ্যবান বান্দা এ ইলম অর্জন করে, এর দাবি পূরণ করে, তাঁরা নবীগণের উত্তরাধিকারী। আসমানের ফেরেশতা থেকে যমিনের পিঁপড়া ও সাগরের মাছ- তথা গোটা সৃষ্টি তাঁদের ভালবাসে, তাঁদের জন্য কল্যাণের দু'আ করে। আল্লাহ্ তা'আলা সেগুলোর প্রকৃতিতে এ বিষয় রেখে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে যে সব ব্যক্তি নবী (আ) গণের এই পবিত্র ত্যাজ্যবিত্তকে ভুল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে তারা নিকৃষ্টতম অপরাধী এবং আল্লাহ্ তা'আলার ক্রোধ ও আযাবের যোগ্য ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url