হজ্জের পরিচয়, গুরুত্ব ও তাৎপর্য
হজ্জ এর আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ :
হজ্জ (حج) আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা বা সংকল্প করা । ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্ধারিত তারিখ ও নিয়মে কা'বা শরীফ ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ যিয়ারত করাকে হজ্জ বলে।
ইসলামে হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ হচ্ছে পঞ্চম। এটা হচ্ছে আর্থিক ও দৈহিক ইবাদত। এতে যেমন অর্থ ব্যয় হয়, তেমনি হয় দৈহিক পরিশ্রম । তাই দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয।
নামায, রোযা ও যাকাত আদায়ের পর একজন মু'মিন বান্দা অন্তরের অনাবিল শান্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে গমন করেন পবিত্র কা'বায়। এখানে একজন মানুষ বান্দা হিসেবে আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে তাঁরই আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে কোন প্রশ্ন না তুলে ঘুরে বেড়ায় কা'বার চারপাশে, চুম্বন করে কালো পাথর হাজরে আসওয়াদ ; সায়ী করে সাফা ও মারওয়ায়, ছুটে যায় ‘আরাফা, মুয্দালিফা ও মিনার ময়দানে, পশু কুরবানীর সাথে সাথে কুরবানী দেয় নিজের সকল পাশবিকতা ।
এমনিভাবে সে তার খিলাফতের দায়িত্বকে উপলব্ধি করার জন্য আরাফার ময়দানে শামিল হয় মুসলিম উম্মাহর মহাবিশ্ব সম্মেলনে। সেখানে জাতিতে জাতিতে, বর্ণে বর্ণে, ভাষায় ভাষায়, হৃদয়ে হৃদয়ে ঘটে মহামিলন। ইহরামের একই পোশাকে সজ্জিত হয়ে সব ধরনের ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে যায় সকলেই। সেখানে সারা বিশ্বের মুসলমানের খোঁজ-খবর নিতে পারে একজন আরেকজন থেকে। তারা নিজেদের সমস্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করার সুযোগ পায় আর সেই আলোকে নিতে পারে সমস্যাসমূহের সমাধান ।
বস্তুত হজ্জ মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশ্ব সম্মেলন এবং ইসলামী ঐক্যের প্রতীক। এ ধরনের মহাসম্মেলন অন্য কোন ধর্ম বা জাতির মধ্যে কখনো অনুষ্ঠিত হয় না। একমাত্র তৌহিদবাদী মুসলিম জাতিই পৃথিবীর দিক-দিগন্ত থেকে ছুটে আসে কা'বার পানে পরম করুণাময়ের নৈকট্য লাভের আশায় । এখানে বর্ণ ও ভাষার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই এক কাতারে দণ্ডায়মান হয়ে একই সুরে উচ্চারণ করেন, লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকালাকা লাব্বায়িক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি'মাতা লাকা ওয়ালমূলক, লা-শারিকালাক।
“আমি হাযির, হে আল্লাহ্ আমি হাযির, আমি হাযির, নেই কোন শরীক আপনার, আমি হাযির, নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিয়ামত আপনারই, আর সকল সাম্রাজ্যও আপনার, নেই কোন শরীক আপনার।”
অশ্রুসিক্ত নয়নে লক্ষ লক্ষ আল্লাহপ্রেমিক বান্দার কন্ঠের এ আওয়ায কা'বায় ধ্বনিত হয়ে আরশে মুআল্লা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে । আর তখন আল্লাহ্ তাঁর বান্দার ডাকে সারা দিয়ে বলেন, হে আমার প্রিয় বান্দা! আমি তোমার সাথেই আছি। আজ তুমি যা চাও তা আমি তোমাকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।
রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সমস্ত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ইহরাম অবস্থায় কোন ভেদাভেদ থাকে না। দু'খানা সাদা কাপড় পরিহিত লক্ষ লক্ষ মানুষের একই কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইবাদতের এ দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব । ভাষা ও বর্ণে ব্যবধান থাকলেও পরস্পর পরস্পরকে আলিংগন করে, হাতে হাত মিলিয়ে পরিতৃপ্তি লাভ করে ।
হজ্জের পরিচয়, গুরুত্ব ও তাৎপর্য প্রবন্ধটি পিডিএফ 👉ডাউনলোড করুন