কৃতজ্ঞতা প্রকাশই ঈমানের ভিত্তি । আল কুরআনের শিক্ষা
কৃতজ্ঞতা ঈমানের ভিত্তি
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوتِ وَالْأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَتِ وَالنُّورَه ، ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ (الانعام : ١)
“সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আলো ও অন্ধকারের উদ্ভব ঘটিয়েছেন। তথাপি কাফিররা স্বীয় প্রতিপালকের সাথে অন্যদেরকে সমতুল্য মনে করে।” -(আনআম : ১)
'নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন' একথা দিয়ে সমস্ত নিয়ামতের কথাই বুঝায় যা তিনি মানুষের কল্যাণ ও প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন।
নিয়ামতসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিয়ামত হচ্ছে আলো ও আধারী। এ দু' প্রকার নিয়ামতের মাঝেই মানুষ পর্যায়ক্রমে বেড়ে ওঠে। অতপর যাত্রা করে মনজিলে মাকসুদের দিকে। এসব নিয়ামতের দাবী হচ্ছে মানুষ এর মর্যাদা বুঝবে, মুখে স্বীকার করবে এবং সত্যিকার অর্থে এর হক আদায় করবে। কৃতজ্ঞতার এ অনুভূতিই মূলত ঈমানের ভিত্তি ।
যে নিজের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার অনুগ্রহের কথা ভুলে যায়, সে নিজের অজান্তেই শিরকের জালে জড়িয়ে যায়। কেননা সে যাবতীয় সার্ভিস পায় আল্লাহর কাছ থেকে কিন্তু সে অন্যকে এর অংশীদার মনে করে । কতো ঘৃণ্য এ প্রকৃতি ! স্বাভাবিক বুদ্ধি-বিবেকও এ ব্যাপারটিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। যার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার কথা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন না করে অন্যকে তার স্থলাভিষিক্ত করার নামই তো শিরক।
مَا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَا بِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَأَمَنْتُمْ ، وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا هِ
“তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহ্ কী করবেন যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো। বস্তুত আল্লাহ্ হচ্ছেন সমুচিত মূল্যদানকারী, সর্বজ্ঞ।” (সূরা আন নিসা : ১৪৭ )
আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অর্থ হচ্ছে—বান্দা তাঁর যাবতীয় নিয়ামত ও অনুগ্রহের ব্যাপারে আর কাউকে অংশীদার মনে করবে না। ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সন্তুষ্টি, শ্রদ্ধা, ভক্তি ও আনুগত্য ইত্যাদি আল্লাহ্র জন্যই হবে। এটিই মূলত ঈমানের মর্মকথা।
যারা কৃতজ্ঞ, কেবলমাত্র তারাই ঈমানের পথ পেতে সক্ষম হয় এবং সে পথে দৃঢ়তার সাথে চলতে পারে। এ জন্যই এ আয়াতে ঈমানের পূর্বে কৃতজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় আল কুরআনের বিন্যাস পদ্ধতির দিকে লক্ষ্য করলেও দেখা যায়, সেখানে এ নীতিই অবলম্বন করা হয়েছে । কুরআনের সর্বপ্রথম সূরায় (আল ফাতিহা) কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসার কথা বলা হয়েছে এবং তারপর দ্বিতীয় সূরায় (সূরা আল বাকারা ঈমানের দাওয়াত দেয়া হয়েছে।