হাদীস এর শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচয় বা সংজ্ঞা
হাদীস নিয়ে প্রাথমিক কথা
মহান রাব্বল আলামীন যিনি সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা তিনি কাদীম' তথা অবিনশ্বর। আর সমস্ত সৃষ্টিজগত হলাে ‘হাদিস' বা নশ্বর।
কাদীম এবং হাদিস হলাে পরস্পর বিরােধী যার একের সঙ্গে অপরের কোনই মিল নেই। আর এ কারণেই স্রষ্টা এবং সৃষ্টির মাঝে কোন কিছু প্রদান এবং গ্রহণ হয়ে উঠে অসম্ভব। যেমন মহাগ্রন্থ আলকোরআনে এসেছে: لَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكًّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًا
"তারপর যখন তাঁর রব পাহারের উপর আপন জ্যোতির বিকিরণ ঘটালেন, সেটিকে বিধ্বস্ত করে দিলেন এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন"। (সূরা আল আ'রাফ, ৭:১৪৩)
অবশ্য মহান আল্লাহ এও করতে সক্ষম যে, তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে কোন মানুষকে এ ক্ষমতা দেন যে, তিনি এ নশ্বর ও অবিনশ্বর তথা সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে মধ্যস্থতা বিধান করবেন।
অবশেষে তিনি তাই করলেন। কেননা স্রষ্টার সাথে আমাদের সম্পর্কই হলাে দাসত্বের সম্পর্ক। মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বল আলামীন হলেন আমাদের মনিব। আর আমরা হলাম তার দাস।
মনিবের কাজ হলাে দাসকে আদেশ-নিষেধ করা। আর দাসের কাজ হলাে মনিবের আদেশনিষেধগুলাে মেনে চলা। কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব! কারণ সে তাে তার স্রষ্টার নির্দেশনাগুলাে শুনতেও পারে না, বুঝতেও পারে না। আর তাই মহান প্রভু মানুষদেরই ভিতর থেকে যুগে যুগে একদল মানুষকে বাছাই করলেন যারা তাঁর নির্দেশনাগুলাে শুনতে এবং বুঝতে পারে। তাদের এই বিশেষ যােগ্যতাটির নাম হলাে (Prophethood) বা 'নবুওয়াত'।
আর যাদেরকে তিনি এই বিশেষ মােগ্যতার অধিকারী বানান তারাই হলেন (Prophet) বা নাবী।
এসব সম্মানিত নাবীদের ভিতর থেকে আবার তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি ও গােত্রের জন্য হিদায়াত ও জীবন বিধান দিয়ে তার পক্ষ থেকে রাসূল প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাবী এবং রাসূল প্রেরণের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী এবং রাসূল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
অনেক সময় জিবরীল আমীন ভরা মজলিসেই ওহী নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসতেন। আর তিনি তার থেকে সে ওহী গ্রহণ করতেন। অথচ পাশে থেকে সাহাবীরা জিবরীল (আ.) কে দেখতে পেতেন না; কী ওহী নাযিল হলাে তা শুনতেও পেতেন না।
আর এ রাসূলকে প্রেরণের উদ্দেশ্য জানিয়ে আলকোরআন বলছেঃ
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ (সূরা আলফাত, ৪৮:২৮)
“তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যেন তিনি এ দীনকে (মানবরচিত) অন্যান্য সকল দীনের উপর বিজয়ী করেন।
মহান প্রভু তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করলেন এই পরিপূর্ণ হিদায়াত ও সত্য দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য। আর সাথে সাথে তিনি তাঁকে নির্দেশ দিলেন তাঁরই নি'আমাত প্রচার করতে। আর এ নিআমাতের প্রচারকেই নাম দিলেন হাদীস করে। কোরআন বলছেঃ
(সূরা ওয়াদ্ দোহা, ৯৩:১১) وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
“আর আপনার পালনকর্তার নি'আমাতের কথা প্রকাশ করুন।”
কাজেই হাদীস শব্দটি মুহাদ্দিসগণের তৈরি করা নয়; বরং মহাগ্রন্থ আলকোরআন থেকেই এর উৎপত্তি। পরবর্তীকালে এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নিম্নে আমরা সেই পরিভাষাটি নিয়েই আলােচনার প্রয়াস চালাব।
হাদীসের শাব্দিক পরিচয় :
সাধারণভাবে হাদীস হলাে এমন জ্ঞান যার দ্বারা নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা, কাজ ও তাঁর অবস্থা জানা যায়। আর অভিধানে হাদীস (حديث) শব্দটি ‘জাদীদ' ( جديد) বা নতুন অর্থে ব্যবহৃত। এর বহুবচন হলাে 'আহাদীস' (احاديث)।
হাদীসের পারিভাষিক সংজ্ঞা বা পরিচয়:
আর হাদীস বিশারদগণের পরিভাষায় এর সংজ্ঞা হলােঃ
هو ما أضيف إلى النبي صلى الله عليه وسلم من قول أو فعل أو تقرير أو وصف خلقي أو خلقي
“যেসব কথা, কাজ, সমর্থন এবং সৃষ্টিগত ও চরিত্রগত গুণাগুণকে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে সম্পর্কিত করা হয় তাই হাদীস”