নেকী ও বদীর ফলাফল কি শুধু আখেরাতে?
নেকী ও বদীর ফলাফল কি শুধু আখেরাতে?
মানুষ কেবল নেকী ও বদীর সুফল ও কুফল শুধু আখেরাতেই ভােগ করবে বলে মনে করে। অথচ দুনিয়াতেও যে ভালমন্দ কাজের ফলাফল অনেকাংশে ভােগ করতে হয় অনেকেই সে বিষয়ে অবগত নয়।
আর আমাদের দুনিয়ার কাজের সাথে আখেরাতের আজাব ও ছওয়াবের যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, উহার বিষয়ে মানুষের পুরাপুরি ধারণা নাই।
মানুষের ধারণা সাধারনতঃ এরূপ যে পরকালে আজাব ও ছওয়াবের একটা স্বতন্ত্র প্রসঙ্গ রয়েছে। যে কারনে আল্লাহতায়ালা যাহাকে ইচ্ছা পাকড়াও করে শাস্তি দেবেন, আর যাকে ইচ্ছা অফুরন্ত নেয়ামতের মালিক বানিয়ে দিবেন।
মনে হয় যেন আজাব ও নেয়ামতের সাথে ইহজীবনের নেকী বদীর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এ ধারণা কোরান ও হাদীসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
কোরান হাদীছ ও বুজুর্গানের বাণীসমূহ দ্বারা একথা প্রমাণ করে যে, নেকী ও বদীর দ্বারা আখেরাতে যেমন তার সুফল ও কুফল ভােগ করবে তেমন দুনিয়াতেও উহার কিছুটা সুফল ও কুফল সংঘটিত হয়ে থাকে।
আমল ও পরিণামের মধ্যে। এমন সম্পর্ক রয়েছে,যেমন আগুন জ্বালালে খানা পাক হয়, খানা খেলে তৃপ্তিলাভ হয় এবং পানি ঢেলে দিলে আগুন নিভে যায়। এই ভাবেই ইহকালের কার্যাবলীর সাথে পরকালের ফলাফল সম্পর্কযুক্ত রয়েছে।
আশা করি আল্লাহর মেহেরবাণীতে এই দুটি কথা বুঝে আসার পর মানুষের মনে এবাদতের প্রতি অনুরাগ ও পাপ কাজের প্রতি ঘৃণা পয়দা হওয়া সহজ হবে।
আমলের সাথে ছাওয়াব ও আজাবের সম্পর্ক পবিত্র কোরানে মজীদে বিভিন্ন বর্ণনা ভঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে, কোথাও আমলকে শর্ত এবং উহার প্রতিক্রিয়াকে প্রতিদান বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে,
যেমন কোরানে পাকে এরশাদ হইতেছে....
فَلَمَّا عَتَوْاْ عَن مَّا نُهُواْ عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُواْ قِرَدَةً خَٰسِـِٔينَ (الأعراف - 166)
যখন তারা নিষিদ্ধ কাজ করে নাফরমানী করল তখন আমি বললাম তােমরা নিকৃষ্টতম বানরে পরিণত হয়েযাও কৃতকর্মের সাজা ভােগ কর।
এটি দ্বারা পরিস্কার প্রমাণিত হল যে, অবাধ্যাচরণ করার কারনেই তারা এমন শাস্তিভােগ করল।
অন্যত্র বর্ণিত আছে।
(فَلَمَّآ ءَاسَفُونَا ٱنتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَٰهُمْ أَجْمَعِينَ (الزخرف - 55
তারা যখন নাফরমানী করে আমাকে অসন্তুষ্ট করল তখন আমি তাদের নিকট থেকে প্রতিশােধ গ্রহণ করলাম।
এই আয়াতে পরিস্কার বুঝা গেল, শাস্তিভােগ করার একমাত্র কারণ হল আল্লাহর নাফরমানী।
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ (الأنفال - 29)
অর্থাৎ: যদি তােমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর তবে তিনি তােমাদের জন্য উপযুক্ত ফয়সালা করে দিবেন আর গােনাহ সমূহ মাফ করে তোমাদের দোষ মুক্ত করবেন।
আরও এরশাদ হয়েছে-
وَأَلَّوِ ٱسْتَقَٰمُواْ عَلَى ٱلطَّرِيقَةِ لَأَسْقَيْنَٰهُم مَّآءً غَدَقًا (الجن - 16)
‘যদি তারা (পাপের পথ পরিত্যাগ করে) সরল পথে মজবুত থাকত তবে আমি তাদেরকে প্রচুর পানি দান করিতাম।
অন্য আয়োতে ইরশাদ হয়েছে-
فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخْوَٰنُكُمْ فِى ٱلدِّينِ (التوبة - 11)
‘যদি তারা তওবা করে ও নামাজ কায়েম করে আর জাকাত আদায় করে তবে তারা তােমাদের দ্বীনী ভাই।
আরও এরশাদ হচ্ছে -
ذٰلِکَ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡکُمۡ وَ اَنَّ اللّٰهَ لَیۡسَ بِظَلَّامٍ لِّلۡعَبِیۡدِ (آل عمران - 182)
(কেয়ামতের দিন বলা হবে) এ হল তোমাদের হাত যা আগাম পেশ করেছে এটা সে কারণে। আর নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের প্রতি যালিম নন।
মহান আল্লাহ আরো বলেন :
فَعَصَوۡا رَسُوۡلَ رَبِّهِمۡ فَاَخَذَهُمۡ اَخۡذَۃً رَّابِیَۃً (الحاقة - 10)
তারা তাদের প্রতিপালকের রসূলকে অমান্য করেছিল, তখন তিনি তাদেরকে পাকড়াও করলেন- অত্যন্ত কঠিন পাকড়াও।
নবীদের না মানার শাস্তি বর্ণনা করে কুরআনে পাকে এসেছে
فَكَذَّبُوهُمَا فَكَانُواْ مِنَ ٱلْمُهْلَكِينَ (المؤمنون - 48)
তারা তাদের দু’জন (মুছা আ.ও হারুন আ.) কে মিথ্যে বলে প্রত্যাখ্যান করল, ফলে তারা ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
হযরত ইউনুস আ. এর বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে-
فَلَوۡ لَاۤ اَنَّهٗ کَانَ مِنَ الۡمُسَبِّحِیۡنَ - لَلَبِثَ فِیۡ بَطۡنِهٖۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ (الصافات 144- 143)
আর সে যদি (আল্লাহর) তাসবীহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হত, তাহলে সে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তার পেটেই থেকে যেত।
কুরআন শরীফের অন্য স্থানে এরশাদ হয়েছে
وَلَوْ أَنَّهُمْ فَعَلُواْ مَا يُوعَظُونَ بِهِۦ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَأَشَدَّ تَثْبِيتًا (النساء - 66)
আর যে উপদেশ তাদেরকে দেয়া হয় যদি তারা তা বাস্তবায়ন করত, তাহলে সেটি হত তাদের জন্য উত্তম এবং স্থিরতায় সুদৃঢ়।
এ সকল আয়াত পরিস্কার প্রমাণ ককরছে যে, আমল এবং আজাব ও ছওয়াবের মধ্যে যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
প্রবন্ধটির পিডিএফ 👉ডাউনলোড করুন