টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানঃ ইসলাম কি বলে?
পায়জামা, লুঙ্গি ইত্যাদি টাখনুর নীচে পরিধান করার ভয়াবহতা
টাখনুর নিচে বর্তমানে মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিছু মানুষ অহংকার করে আবার কিছু মানুষ অব্যাস বসত টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করছে। এথচ এ ব্যপারে হাদীসের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
টাখনুর নীপে কাপড় পরিধান করার বিষয়ে কয়েকটি হাদীস
হাদীছঃ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, লুঙ্গী বা পায়জামার যে অংশটুকু টাখনুর নীচে হবে উহা জাহান্নামে থাকবে। -(বুখারী)।
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) বলেন যে, একদা আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হলাম, তখন আমার লুঙ্গি গিঠের নীচে ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে? আমি আরয করলাম, আমি আবদুল্লাহ বিন উমর। তিনি বললেন, যদি তুমি আবদুল্লাহ হয়ে থাক তবে তুমি নিজ লুঙ্গি উঁচু করে পরিধান কর, আমি উঁচু করে ফেললাম, এমন কি পায়ের গােছার মাঝামাঝি হয়ে গেল। পরবর্তী সময়ে আমার এটাই ছিল রীতি। -(যাওয়াযের)
হাদীছঃ
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা ঐ ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করবেন না, যে ব্যক্তি নিজের কাপড়কে অহংকারের কারণে টানবে এবং লম্বা করবে। -(বুখারীও মুসলিম)
হাদীছঃ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তা'আলা লক্ষ্য করবেন না, তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
হাদীছের রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি তিন বার বললেন, হযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) বললেন, এ সকল ব্যক্তিগণ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এবং ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে তারা কারা? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে পায়জামা, লুঙ্গি পরিধান করে, যে ব্যক্তি পরােপকার করে খোটা দেয় এবং যে ব্যক্তি নিজের মাল বিক্রির জন্য মিথ্যা কসম খায়। -(আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজা)
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুঙ্গি এবং পায়জামা সম্বন্ধে যা ইরশাদ করেছেন, সে হুকুমই প্রয়ােগ করা হবে পাঞ্জাবী এবং অন্যান্য (বিশেষ পােষাক) এর ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ যে কোর পোষাক পুরুষের জন্য টাখনুর নীচে পরিধান করা গুনাহ। -(আবু দাউদ)
টাখনুর নীপে কাপড় পরিধান করার বিষয়ে মাসয়ালাঃ
যে ব্যক্তি অহংকার বা গর্বের কারণে স্বীয় লুঙ্গি পায়জামা গিঠের নীচে পরিধান করে, সে গুনাহে কবীরা কারী বলে গণ্য হবে। যে ব্যক্তি অহংকার বা গর্বের ধারণা না নিয়ে এভাবে পরিধান করার অভ্যাস হয়ে গেছে তবুও গুনাহ হবে। -(আলমগীর)
যদি কোন ব্যক্তির লুঙ্গি বা পায়জামা অনিচ্ছায় কোন সময় নীচে চলে যায়, তাহলে গুনাহ হবে না। যেমন হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর এমনটি হয়েছিল, তিনি হুযুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি তাকে অক্ষম সাব্যস্ত করলেন।
উপদেশঃ
এ সামান্য ব্যাপারেও নবী আলাইহিস সালাম নিজের উম্মতকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু উম্মত নিজের অনর্থক অভিলাষকে আল্লাহ ও তদ্বীয় রসূলের সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করছে না।
এমন গুনাহ কাঁধে নিজের কাধে তুলছে যা বিশেষ রহমত ও ক্ষমার সময়েও ক্ষমা করা হয় না। যেমন হাদীছে এসেছে শবে বরাতে আল্লাহ তা'আলা বনী বকর গােত্রের ভেড়ার পালের লােমের সংখ্যা পরিমাণ গুনাহগারকে ক্ষমা করে দেন।
বনী বকর গােত্রের নাম বিশেষ করে এ জন্য উল্লেখ করেছেন যে, এ গ্রোতের প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট বকরী ও ভেড়ার পাল ছিল। এখন একটু আন্দাজ করুন, একটি ভেড়ার লােম কতগুলাে হবে এবং একটি পালের কতটি। অতঃপর হাজার পাল ভেড়ার লোম কতগুলাে হবে?
কিন্তু হাদীছে আছে যে, এমন ব্যাপক ক্ষমা ও রহমতের সময়ও কয়েকজন দুর্ভাগা ব্যক্তি ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হবে। তাদের মধ্যে একজন, যে অহংকার ভরে নিজের পায়জামা বা লুঙ্গি গিঠের নীচে পরিধান করে।
আল্লাহ তাআলা মুসলমানগণকে এ মহাবিপদ থেকে হিফাযত করুন। আমিন।
প্রবন্ধটির পিডিএফ 👉ডাউনলোড করুন