আলিম এবং আল্লাহর ওলীদের সঙ্গে বেআদবী‘র ভয়াবহতা - মাও. আশরাফ আলী থানবী (রহ.)
{Ads}
আলিম এবং আল্লাহর ওলীদের সঙ্গে বেআদবী :
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; তিন প্রকারের মানুষের সঙ্গে বেআদবী কেবল মুনাফিকরাই করতে পারে। (১) বৃদ্ধ মুসলমান (২) আলিম (৩) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। -(তিররানী)।
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ; ঐ ব্যক্তি আমাদের তথা মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বৃদ্ধদের সম্মান করে না, শিশুদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না এবং আলিমদের শ্রদ্ধা করে না। -(যাওয়াজের ১ম খণ্ড ৭৮ পৃষ্ঠা)।
বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার ওলীর অসম্মানী করে সে যেন আমার সঙ্গে যুদ্ধের ঘােষণা দেয়। অন্য এক রিওয়ায়তে এসেছে আমি তাকে যুদ্ধের ঘােষণা দিয়ে দিলাম।
আলিম এবং ওলীদের সঙ্গে বেআদবীকে অনেকেই কবীরা গুনাহর মধ্যে গণ্য করেছেন। (যাওয়াজের)। বুখারীর ব্যাখ্যাকারী যুরকানী উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় লিখেন।
উল্লিখিত হাদীছে ভেবে দেখ যে, আলিমদের এবং ওলীদের সঙ্গে বেআদবীর শান্তি সুদখােরের শাস্তির অনুরূপ করা হয়েছে।
কেননা সুদখােরদের সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে ।
فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ
অর্থাৎ : সুদখাের যেন আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য তৈরি
হয়ে যায়।
ইমাম ইবনে আসাকির বলেন, হে বন্ধুগণ! আল্লাহ তা'আলা আমাকে এবং তােমাদেরকে পূর্ণ তৌফিক দান করুন এবং সহজ সরল রাস্তা প্রদর্শন করুন।
ভালভাবে বুঝে নেয়া প্রয়োজন, আলিমদের গােস্ত বিষ মিশ্রিত। আল্লাহ তাআলার এ নিয়ম সুপরিচিত ও সুবিধিত যে, তিনি আলিমদের অবমাননাকারী ও অপবাদ প্রদানকারীকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে থাকেন।
যে ব্যক্তি আলিমদের দোষ ধরার চিন্তায় থাকে, আল্লাহ তাআলা তার মৃত্যুর পূর্বে তার অন্তরের মৃত্যুর ব্যবস্থা করে দেন। আলিমদের গােস্ত বিষ মিশ্রিত হওয়ার অর্থ এই যে, কুরআন শরীফে কারাে গীবত বা পরনিন্দা করাকে তার গােস্ত খাওয়ার শামিল করেছেন। তাই যে ব্যক্তি আলিমদের গীবত করে সে যেন তাদের গােস্ত ভক্ষণ করে। কিন্তু তাঁদের গােস্ত বিষ মিশ্রিত। কাজেই যে ব্যক্তি উহা খাবে তার দ্বীন ধ্বংস হয়ে যাবে। অন্তরের মৃত্যু হওয়ার অর্থ এই যে, তার মধ্যে পাপ পূণ্য , ভাল মন্দের অনুভূতি থাকবে না । পূণ্যকে পাপ, মন্দকে পূণ্য বুঝবে।
কোন ব্যক্তির গীবত করা বা কাউকে ঘৃণা করা জায়েয নয়। যে ব্যক্তি আলিমদের সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করবে সে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার গজব ও ক্রোধের পাত্রে পরিণত হয়। আলিমগণ লিখেছেন, এমন ব্যক্তির পরিণাম মন্দ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
সতর্কবাণী : একটু ভেবে দেখুন, বর্তমানে কত মুসলমান এ স্বাদহীন অনুপকারী কবীরা গুনাহর মধ্যে লিপ্ত হয়ে নিজ দ্বীন ও ধর্মকে ধ্বংস করছে এবং নিশ্চিতভাবে নিজেই নিজকে আল্লাহ তা'আলা ও তদ্বীয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গজব এবং ক্রোধের পাত্রে পরিণত করছে। এ ব্যাপারে এত শিথিলতা এত নির্ভয় যে, সমুদয় মন্দ বিনা অনুসন্ধানে আলিমদের ঘাড়ে চাপানাে কারাে সমালােচনা না হলেও আলিমদের সমালােচনা হবেই।
বর্তমানে উম্মত দলাদলির রােগে আক্রান্ত। প্রত্যেক দলের লােকেরা শ্রদ্ধা ভক্তি সম্মান সম্পর্কীয় সকল আয়াত এবং হাদীছ নিজ দলের আলিমদের জন্য নির্ধারিত বলে বিশ্বাস করে। প্রতিপক্ষের আলিমদের প্রতি যতই ধৃষ্টতা প্রদর্শন করুক তাতে কোন ভয় করে না।
বর্তমানে ধর্মীয় বিধানসমূহ সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে এবং কিছু সাধারণ লােক দ্বীনের প্রতি অমনোেযােগী হওয়ার কারণে এমন অনেক লােক যারা প্রকৃত পক্ষে আলিম নয়, আলিমদের মধ্যে গণ্য হতে শুরু করেছে।
জনসাধারণের অবস্থা হলাে এই যে, যার মুখে দাঁড়ি এবং গায়ে লম্বা পাঞ্জাবী দেখল তাকেই মাওলানা লকব দিয়েদিল। যে ব্যক্তি কোন আন্দোলনে কারাবরণ করল এবং কোন সভায় দাঁড়িয়ে দু'চার কথা বলে দিল, তাহলে সে বড় আল্লামা, বড় নেতা এবং রেজিষ্ট্রীকৃত মাওলানা হয়ে গেল। পরে এ সকল আলিমদের থেকে যখন অশােভনীয় কর্ম প্রকাশিত হয় তখন আলিমদের প্রতি ক্রোধের বান নিক্ষেপ করতে থাকে। অথচ কোন খোঁজ খবর না নিয়ে তাকে নিজেই নিজের ইমাম বানালাে এবং তাকেই মাওলানা বলে আখ্যায়িত করল। অতঃপর তার কার্যাবলীকে সকল আলিমের কার্যাবলী বলে সাব্যস্ত করে আলিমদেরকে গালমন্দ করে অপবাদ দিয়ে নিজের দ্বীন ও দুন্ইয়াকে ধ্বংস করল।
জনসাধারণের এ অসতর্কতা অনেক ধ্বংস সৃষ্টি করেছে।
প্রথমতঃ যারা কাউকেও বিনা দলীলে, বিনা পরীক্ষায় নিজেদের পথ প্রদর্শক বানালাে যদি সে প্রকৃতপক্ষে আলিম না হয়, তবে সে প্রতি পদক্ষেপে ভুল করে নিজে ভ্রষ্ট হবে অন্যকেও ভ্রষ্ট করবে। অতঃপর যখন মানুষ তার ভ্রষ্টতা, অসৎ কার্যাবলী লক্ষ্য করে সন্দেহান্বিত হবে তখন এ সন্দেহ শুধু তার প্রতিই থাকবে না; বরং সকল আলিমদের প্রতি সন্দেহান্মিত হয়, যার পরিণাম ইহকাল ও পরকালের ধ্বংস।
এ জন্যই কাউকে মৌলবী, মাওলানা বা আলিম বলতে তড়িঘড়ি করা উচিত নয়। যখন খোঁজখবর নিয়ে সততার সঙ্গে ঐ ব্যক্তি আলিম বলে প্রমাণিত হবে, তখন তাকে মন্দ বলতে, সমালােচনা করতে তাড়াতাড়ি কর না; বরং তার প্রকাশ্য মন্দ দেখলেও তার মন্দ কাজটিকে মন্দ বলবে কিন্তু তাকে মন্দ বলবে না। হতে পারে, সে কোন কারণে অক্ষম। কেননা, সাধারণের দ্বীনের হিফাযত তার মধ্যে নিহিত রয়েছে।
প্রবন্ধটির পিডিএফ ডাউনলোড করুন 👇