অন্যকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও উপহাস করার ক্ষতি ✍ মুফতি মুহাম্মাদ শফি (রহ.)

ইসলামিক ওয়েবসাইট

 

অন্যকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ উপহাস করার ক্ষতি

ঠাট্টা-বিদ্রুপ উপহাস করা কবীরা গুনাহ। ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীর এতে কোন | পার্থিব এবং সামাজিক উপকার নেই। কিন্তু সাধারণ মুসলমান অসাবধানতায় | দ্বিধাহীনভাবে এতে লিপ্ত রয়েছে।

কুরআন মজীদে ইরশাদ হচ্ছে

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسٰىٓ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّن نِّسَآءٍ عَسٰىٓ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ

কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে।” (সূরা হুজরাত -১১)

উপহাস বিভিন্নভাবে হতে পারে-

() কারো চলাফেরা, উঠাবসা, হাসা, বলা ইত্যাদি নকল করা বা দেহের উচ্চতা, গঠন, আকার আকৃতির নকল করা

() কারো কথায় হাসা

() হাত, পা কিংবা চোখের ইঙ্গিতে কারো দোষ-ক্রটি প্রকাশ করা।

এগুলো এমন গুনাহ যাতে কোন উপকার নেই এবং স্বাদহীনও যা বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করেছে।

জনসাধারণ থেকে শুরু করে বিশেষ ব্যক্তিবর্গ পর্যন্ত সবাই এতে লিপ্ত রয়েছে। অথচ কুরআন মজীদের উপরোল্লিখিত আয়াতে এটিকে স্পষ্টভাবে হারাম বলেছে।

অন্যত্র উল্লেখ আছে;

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ

অর্থাৎপ্রত্যেক বিদ্রুপকারী এবং দোষ অন্বেষণকারীর জন্য ধ্বংস।” (সূরা হুমাঝাহ, আয়াত -১)

 

অন্য আয়াতে করীমায় আছে-

وَيَقُولُونَ يٰوَيْلَتَنَا مَالِ هٰذَا الْكِتٰبِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّآ أَحْصٰىهَا

অর্থাৎতারা বলবেঃ হায় আফসোস, কেমন আমলনামা, এতে যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি - সবই এতে রয়েছে।" -(সুরা কাহফ-৪৯)

আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আয়াতে صَغِيرَةً - দ্বারা মর্মার্থ হচ্ছে, কোন মুসলমানকে নিয়ে ঠাট্টা-রূপে মুচকি হাসা। আর كَبِيرَةً দ্বারা মমার্থ হলো এতে অট্টহাসি হাসা।

" হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন যে, একবার আমি কোন এক ব্যক্তির নকল করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করে ইরশাদ করেন যে, যদি আমাকে বিরাট ধন-সম্পদ দেয়া হয় তবুও আমি কারো কোন বিষয় নকল করব না।

এতে এদিকেও ইঙ্গিত হতে পারে যে, ইহা এমন এক স্বাদহীন অনুপকারী গুনাহ যার মধ্যে উপকার নেই।

যদি ধরে নেয়া হয় যে, তাতে উপকার আছে তবুও তার নিকটে যাওয়া উচিত নয়।

হযরত হাসান (রাঃ) বলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারা অন্য মানুষকে উপহাস করে পরকালে তার জন্য জান্নাতের একটি দরজা খুলে তাকে সেদিকে ডাকা হবে, সে তাড়াহুড়া করে সেখানে পৌছবে সঙ্গে সঙ্গে দরওয়া বন্ধ করে দেয়া হবে। পরে দ্বিতীয় একটি দরজা খোলা হবে এবং তার দিকে ডাকা হবে। যখন সে সেখানে পৌছবে বন্ধ করে দেয়া হবে এমনিভাবে জান্নাতের দরজাসমূহ অনবরত খোলা হবে এবং বন্ধ করা হবে পর্যন্ত যে, সে নিরাশ হয়ে যাবে এবং পরে তাকে ডাকা হলেও দরওয়ার দিকে সে যাবে না। -(বায়হাকী)

এক ব্যক্তির গুহ্যদ্বার দিয়ে বায়ু শব্দের সঙ্গে বের হলে অন্যেরা হাসতে লাগল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধমকের স্বরে উপদেশ দিয়ে বললেন, যে কাজ তোমরা সকলেই করে থাক তাতে হাসি কেন?

হযরত মা'আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অন্যকে তার কৃত গুনাহর জন্য লজ্জা দিবে সে ব্যক্তি যে পর্যন্ত গুনাহতে লিপ্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। আহমদ বিন মুনিয় (রাঃ) বলেন, এখানে গুনাহর অর্থ সেই গুনাহ, যা থেকে সে তাওবা করে ফেলেছে। (তিরমিযী)

সতর্ক বাণী ? কেউ কেউ অজ্ঞতা অমনোযোগিতার কারণে উপহাস এবং ঠাট্টাকে কৌতুকের অন্তর্ভুক্ত মনে করে এতে লিপ্ত হয়ে যায়। অথচ উভয়ের মধ্যে বিরাট ব্যবধান রয়েছে।

কৌতুক জায়েয, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও প্রমাণিত আছে, তবে শর্ত হলো কোন কথা যেন অবাস্তব না হয় এবং কারো অন্তরে কষ্ট না পায়, এটি যেন অভ্যাস এবং পেশায় পরিণত না হয়, ঘটনাক্রমে যেন হয়। -(ইহইয়াযুল উলুম)

যে ঠাট্টা বা পরিহাসের দ্বারা কারো মনে কষ্ট নিশ্চিত হয় তা হারাম, এতে সকলেই একমত। -(যাওয়াজের খণ্ড ১৮ পৃষ্ঠা)

ঠাট্টা, পরিহাস কে কৌতুকের অন্তর্ভুক্ত মনে করা গুনাহ এবং মুর্খতাও।

 

 প্রবন্ধটির পিডিএফ ডাউনলোড করুন এখানে

http://www.su-path.com সু-পথ.কম সদা সত্যের প্রথ দেখায় ...




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url