অনর্থক ও অনুপোকারী কথা কিংবা কর্ম থেকে বিরত থাকুন -মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ শফি (রহ.)
অনর্থক ও অনুপোকারী কথা কিংবা কর্ম থেকে বিরত থাকুন
মানুষ যত কথা বা কাজ করে, সাধারণত তা তিন প্রকার-
(১) দরকারী তথা লাভজনক, যার মধ্যে দুনিয়া বা আখেরাতের কল্যন আছে
(২) ক্ষতিকারক যাতে ইহকাল ও পরকালের ক্ষতি বিদ্যমান রয়েছে
(৩) উপকারীও নয় অপকারীও নয়, যার মধ্যে কোন উপরকার নেই অপকারও নেই।
এই তৃতীয় প্রকার নিয়ে যদি একটু চিন্তা করা হয়, তাহলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই তৃতীয় প্রকারও আসলে দ্বিতীয় প্রকারে অর্থাৎ ক্ষতিকারকে অন্তর্ভুক্ত।
কেননা ঐ সময়টুকু যাতে এ অনুপোকারী কথা বা কাজে ব্যয় না করে, তাতে যদি একবার সুবহানাল্লাহ' বলা হতো, তাহলে আমলের পাল্লা অর্ধেক পূর্ণ হয়ে যেত।
যদি অন্য কোন লাভজনক আমল করা হতো, তাহলে গুনাহসমূহের কাফফারা এবং পরকালে নাজাতের ওসীলা কিংবা অন্ততঃ দুন্ইয়ার প্রয়োজন পুরণ হতো।
এই অনুপকারী কাজ বা কথায় সময় ব্যয় করার উদাহরণ এমন-
কাউকে এখতিয়ার দেয়া হলো যে, তুমি ইচ্ছা করলে স্বর্ণ রৌপ্য ও মণি মুক্তার একটি খনি নিতে পারো অথবা একটি মাটির স্তুপ নিতে পারো।
এখন কেউ যদি স্বর্ণের পরিবর্তে মাটির স্তুপ উঠিয়ে নেয়। এতে যে তার বিরাট ক্ষতি হলো তা খুবই প্রকাশিত; তা বলার অবকাশ রাখে না।
এ জন্যই হাদীছ শরীফে আছে, যে ব্যক্তি কোন মজলিসে বসে এবং উক্ত মজলিসে আল্লাহর যিকির না হয়, তবে কিয়ামতের দিবসে এই মজলিস তার জন্য আক্ষেপ ও লজ্জার কারণ হবে।
অর্থাৎ যেই জ্ঞান মানুষকে সঠিক রাস্তা প্রদর্শন না করে, সে জ্ঞান অজ্ঞতা, যেই মজলিসে আল্লাহর যিকির নেই সেই মজলিস তার জন্য দুর্ভাগ্য।
অমূল্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য ধন ভান্ডার প্রতি মুহূর্তে অর্থহীনভাবে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে, এজন্য শত আফসোস।
এ জন্যই নিরর্থক কাজ-কর্মকে এবং অপ্রয়োজনীয় বন্ধুবান্ধবের মজলিসে বসাকে জ্ঞানি ব্যক্তিগণ গুনাহর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
কিছু হাদীছে এর সমর্থনও পাওয়া যায়।
তিরমিযী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত হাদীছে শরীফে আছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “কোন ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ সহীহ-শুদ্ধ হওয়ার একটি নির্দশন হচ্ছে অনুপকারী কর্মসমূহকে পরিত্যাগ করা।” (তিরমিযী,
ইবনে মাজা)।
অন্য এক হাদীছ শরীফে আছে, একদা হযরত কা'ব বিন উজরাহ (রাযিঃ) কয়েক দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি লোকদের কাছে তাঁর কথা জিজ্ঞেস করলেন। বলা হলো যে, তিনি অসুস্থ।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অবস্থা জানার জন্য তাশরীফ নিয়ে গেলেন। তার অবস্থা শোচনীয় দেখে তিনি ইরশাদ করলেন, হে কা'ব! তোমার জন্য সুসংবাদ।
তখন তার মাতা বলে ফেললেন, হে কা'ব! তোমার জান্নাত নসীব হবে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন যে, আল্লাহ তা'আলার ব্যাপারে কসম খেয়ে হস্তক্ষেপকারী সে কোন ব্যক্তি? হযরত কা'ব বললেন, তিনি আমার মাতা ।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন। তুমি কি জান? হয়তো কা'ব কখনো অপ্রয়োজনীয় কথা বলেছে বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে কৃপণতা করেছে।
কাজেই কারো সম্বন্ধে জান্নাতের ফায়সালা করার অধিকার কার আছে? এর বাহ্যিক মমার্থ হলো যে, অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজের হিসাব হবে। আর যার থেকে হিসাব নেয়া হবে এবং যে জবাবদিহীর সম্মুখীন হবে তার
নাজাত অনিশ্চিত। -(ইহইয়াউল উলুম)।
প্রবন্ধটির পিডিএফ ডাউনলোড করুন 👉 এখানে