হালাল উপার্জনের ফযীলত
হালাল উপার্জনের ফযীলত
আবু তাহের মিছবাহ
হালাল কামাই এবং সততা ও ঈমানদারির সঙ্গে ব্যবসা করার বিরাট বিরাট ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
فَإِذَا
قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ
وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
আর
যখন ছালাত আদায় করা হয়ে যাবে তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর দান
সন্ধান করো, আর আল্লাহকে বেশী বেশী
স্মরণ করো, যাতে তোমরা কামিয়াব হও।
(আল-জুমু'আহ, ৬২ : ১০)
যারা ছালাতের পাবন্দি করবে, তারপর জীবিকার সন্ধানে নিয়োজিত হবে এবং সেক্ষেত্রে আল্লাহর
আদেশ-নিষেধ পূর্ণমাত্রায় স্মরণ রাখবে, তারা আল্লাহর পক্ষ হতে দান ও নেয়ামত লাভ করবে এবং দুনিয়া
ও আখেরাতে কামিয়াবি হাছিল করবে।
হযরত
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত হাদীছে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেছেন
طلب
كسب الحلال
فريضة بعد
الفريضة
হালাল
উপার্জন করাও দ্বীনের অন্যান্য ফরযের পর একটি ফরয কাজ। (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৭৪১)
আরো
বড় ফযীলতের কথা এই যে, সত্যতা ও
বিশ্বস্ততার সঙ্গে যে ব্যবসা করে (কেয়ামতের দিন) সে আম্বিয়া, ছিদ্দীকীন ও শহীদানের সঙ্গী হবে। (তিরমিযি, হাদীছ নং ১২০৯)
সুবহানাল্লাহ!
এত বড় ফযীলতের কথা তো খালেছ ইবাদত সম্পর্কেও বলা হয়নি! আসল কথা হলো, ইসলামের দৃষ্টিতে ছালাত, যাকাত, ছিয়াম ও
হজ্ব যেমন ইবাদত তেমনি ঈমানদারি ও আমানতদারির সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য করা এবং হালাল
উপায়ে নিজের ও পরিবারের জন্য উপার্জন করাও অনেক বড় ইবাদত।
একারণে
ছাহাবা কেরাম যেমন দ্বীনের জন্য জিহাদ করেছেন তেমনি বাজারে গিয়ে ব্যবসা করেছেন, আবার জীবিকার প্রয়োজনে মজদুরীও করেছেন, তবে সর্বক্ষেত্রে এমনভাবে আমানতদারি ও বিশ্বস্ততা রক্ষা
করেছেন যে, মানব-ইতিহাসে তার নমুনা
খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
সে
পবিত্র ধারা পরবর্তী বহু যুগ পর্যন্ত রক্ষিত হয়েছে। কিন্তু আফসোস, ধীরে ধীরে উম্মতের দ্বীনদারির মধ্যে যেমন অধঃপতন এসেছে
তেমনি মু'আমালাতের ক্ষেত্রে আরো বড় অধঃপতন এসে গেছে। হাদীছের সেই
ভবিষ্যদ্বাণী যেন এখন বাস্তব হতে চলেছে যে, বলা হবে, অমুক বস্তিতে
একজন আমানতদার ব্যক্তি রয়েছে। (বোখারী, ৬৪৯৬, মুসলিম, ১৪৩)
অনেকে
বলে,
বর্তমান যুগে সততা ও আমানতদারির সঙ্গে ব্যবসা করে বাজারের প্রতিযোগিতায়
টিকে থাকা তো একপ্রকার অসম্ভব। তাই ইচ্ছা থাকলেও বাজারে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। এটা আসলে শয়তানের ধোকা।
মানুষ
যখন পূর্ণ প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করে তখন আল্লাহ তা'আলা গায়ব থেকে তাকে সাহায্য করেন। হতে পারে, শুরুতে কিছুটা পরীক্ষার হালত আসবে, তবে দ্বীনের উপর অবিচল থাকলে সততা, সত্যবাদিতা ও আমানতদারির সুফল অবশ্যই আসবে।
এ
যুগেও এবং এ দেশেও সৎ ও সত্যবাদী ব্যবসায়ীর উদাহরণ রয়েছে।
অবশ্য
শরী'আতে ‘আযীমত’ (উচ্চপন্থা) যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে রোখছত
(ছাড়)। সুতরাং
পূর্ণ আযীমতের উপর আমল করা সম্ভব না হলে রোখছতের উপর আমল করারও অবকাশ রয়েছে। তবে
সেটা নফসের খাহেশাত অনুযায়ী নিজে নিজে নির্ধারণ করাটা বরবাদির কারণ হতে পারে।
এক্ষেত্রে বিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য আলিমের হেদায়াত অনুযায়ী চলাটাই হবে কর্তব্য।