লেনদেনে কোমলতা ও উদারতা

লেনদেনে কোমলতা ও উদারতা, বান্দার হক, পারস্পরিক আচরণ

 

লেনদেনে কোমলতা ও উদারতা

ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে আমানতদারি রক্ষা করা হলো ফরয। এটা না হলে তো তার কামাই হয়ে যাবে সরাসরি হারাম। তবে শরী'আতে আমানতদারি রক্ষা করার পর আরেকটি বিষয়ের উপরও খুব জোর দেয়া হয়েছে এবং সেটার বহু ফযীলত বয়ান করা হয়েছে।

আর তা হলো সাধ্যমত মানুষের সঙ্গে কোমলতা ও উদারতার আচরণ করা। যেমন ফিকহের সমস্ত কিতাবে একটি মাসআলা আছে। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য ও মূল্য নির্ধারিত হওয়ার পর বিক্রেতা ইচ্ছা করলে অতিরিক্ত কিছু পণ্য যোগ করতে পারে, আবার ক্রেতা ইচ্ছা করলে নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু অর্থ যোগ করতে পারে। এটা হলো হুসনে সুলুক বা উত্তম আচরণ। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা থাক, যারা কিতাবে এ মাসআলা পড়েছি তারা এর উপর জীবনে কয়বার আমল করেছি?

আযীমত অর্থ কোন বিষয়ে শরী'আতের মূল বিধান, যাতে কঠোরতা রয়েছে, আর রোখছত মানে শরী'আতের বিকল্প বিধান, যাতে কিছুটা ছাড় ও শিথিলতা রয়েছে।  

যে সকল বিষয়ে আযীমত ও রোখছত দুটোই রয়েছে সে ক্ষেত্রে উত্তম হলো আযীমতের উপর আমল করা, তবে রোখছতের উপর আমল করারও অবকাশ রয়েছে।

 

কয়েক বছর আগের ঘটনা। হঠাৎ বন্যার কারণে বাজারে পুঁইশাকের এত বেশী সরবরাহ হলো যে দাম একেবারে পড়ে গেলো। যেখানে স্বাভাবিক মূল্য ছিলো ছয়টাকা কেজি সেখানে হয়ে গেলো দু'টাকা কেজি। তাও বিক্রি হয় না। এক মাদরাসার যিম্মাদার বিশ কেজি পুঁইশাক খরিদ করলেন। বিক্রেতা বললো, চল্লিশ টাকা দেন। ক্রেতা মাওলানা সাহেব বললেন, ভাই এত সস্তা হলে তো তোমার অনেক ঠক হয়ে যাবে, আমি চারটাকা কেজি দিচ্ছি যাতে তোমার ক্ষতি কিছু কম হয়। এ কথায় বিক্রেতার চোখে পানি এসে গেলো।

এক হজ্বের ঘটনা। মদীনা শরীফে একটি পোলের নীচে এক বেদুঈন কিছু শশা বিক্রি করছে পাঁচ রিয়াল কেজি। কাফেলার যিম্মাদার ছাহেব বড় আলেম, তিনি ছয় রিয়াল দিয়ে বললেন, আমি এক রিয়াল বেশী দেরো। সেই বেদুঈনের মুখের হাসিটি এখনো মনে পড়ে। কৃতজ্ঞতার স্বরে বারবার সে বলছিলো, জাযাকাল্লাহু খায়রান।

তো মাঝে মধ্যে এর উপর আমল করে আমরা সহজেই ঐ ফযীলত হাছিল করতে পারি যা হাদীছ শরীফে এভাবে বর্ণিত হয়েছে

رحم الله رجلا سمحا اذا باغ واذا اشترى واذا اقتضى

আল্লাহ তাআলা ঐ বান্দাকে রহম করুন যে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এবং অন্যের কাছ থেকে নিজের হক উশুল করার ক্ষেত্রে উদার ও কোমল আচরণ করে। (বোখারী, হাদীছ নং ২০৭৬)

এক হাদীছে এসেছে, “যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে (কর আদায়ের ক্ষেত্রে) কিছু ছাড় দেয়, কিংবা (আংশিক, অথবা পুরোটা) মাফ করে দেয়, আল্লাহ তা'আলা কেয়ামতের দিনের পেরেশানি থেকে তাকে নাজাত দেবেন। (অন্য বর্ণনায়, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাকে রহমতের ছায়ার নীচে স্থান দেবেন। (তিরমিযি, হাদীছ নং- ১৩০৬)


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url