মাপে কম দেয়া একটি জঘন্য অন্যায় -আবু তাহের মিছবাহ

 মাপে কম দেয়া

বর্তমানে দোকান-বাজারে মাপে কম দেয়া চরম ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বরং লজ্জার বিষয় যে, অমুসলিম সম্প্রদায়ের চেয়ে মুসলিম জাতি যেন এতে বেশী পরিমাণে লিপ্ত।

বলতে শোনা যায়, ‘অমুসলিমকে বিশ্বাস করা যায়, মুসলিমকে নয়। অথচ যে কোরআনে ছালাত-ছিয়াম ও ইবাদতের কথা বলা হয়েছে সেই কোরআনেরই আদেশ হলো-

وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ۚ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا

আর যখন তোমরা কোন কিছু পাত্র দ্বারা পরিমাপ করে দাও পর্ণরূপে পরিমাপ করো এবং সঠিক পাল্লা দ্বারা মেপে দিয়ো । এটাই সঠিকপন্থা এবং পরিণতির দিক থেকে উত্তম। (আল-ইসরা, ১৭ : ৩৫)

وَإِلٰى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۗ قَالَ يٰقَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلٰهٍ غَيْرُهُۥ ۖ قَدْ جَآءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَآءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا فِى الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلٰحِهَا ۚ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

আর মাদয়ানে (পাঠিয়েছি) তাদের ভাই শো’আয়বকে। তিনি বললেন, হে আমার কাউম, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তোমাদের জন্য কোন ইলাহ নেই তিনি ছাড়া। অবশ্যই এসেছে তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে স্পষ্ট প্রমাণ। সুতরাং তোমরা পাত্র ও পাল্লার মাপ পূর্ণ করো, আর মানুষকে তাদের জিনিসপত্রে ঠক দিয়ো না; আর ভূখণ্ডে ফাসাদ মাচিয়ো না, তার সংশোধনের পর। এটাই হবে তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। (আল-আ'রাফ, ৭: ৮)

وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ (1)

الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ (2)

وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ (3)

أَلَا يَظُنُّ أُولَـٰئِكَ أَنَّهُم مَّبْعُوثُونَ (4)

لِيَوْمٍ عَظِيمٍ (5)

يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ (6)

(১) বরবাদি হোক মাপে প্রতারকদের জন্য, (২) যারা লোকদের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, পুরো পুরো নেয়, (৩) আর যখন লোকদেরকে পরিমাপ করে, বা মেপে দেয় তখন ঠকিয়ে দেয়। (৪) তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে।                                 () সেই মহাদিবসে, () যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব পালনকর্তার সামনে। (মুতাফফিফীন, ৮৩:১- ৬)

 

নীচের আয়াতে সাধারণভাবে যে কোন আর্থিক কারচুপি, অর্থআত্মসাৎ ও হারাম কামাই সম্পর্কে নিষেধ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, হারাম মাল থেকে বেঁচে থাকা ঈমানেরই দাবী

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تَأْكُلُوٓا أَمْوٰلَكُم بَيْنَكُم بِالْبٰطِلِ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের মাল আত্মসাৎ করো

না। (নিসা : ৪ : ২৯)।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. হতে বর্ণিত হাদীছে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, যার মালের মধ্যে হারামের সামান্য মিশ্রণও আছে তার না ছালাত কবুল হবে, না কোন দু'আ কবুল হবে, যতক্ষণ না সে তা থেকে মুক্ত হবে। (মুসনাদে আহমদ, ২/৯৮, হাদীছ নং ৫৭৩২)

একটি হাদীছের ভাষ্য হলো, যে ব্যক্তি হারাম মাল ছাদাকা করবে, তা কবুল করা হবে না এবং তা দ্বারা জাহান্নামের আগুন নেভানো হবে না। আর যে তা নিজের প্রয়োজনে খরচ করবে, তাতে বরকত হবে না। আর যে তা ওয়ারিছদের জন্য রেখে যাবে তা হবে তার নিজের জন্য জাহান্নামের পাথেয়। (মুসনাদে আহমদ, ১/৩৮৭, হাদীছ নং ৩৬৭২)

হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন


হারাম মাল দ্বারা প্রতিপালিত শরীর কখনো জান্নাতে যাবে না।

আরেকটি হাদীছহযরত আবু হোরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে লোকসকল, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাইয়েব (উত্তম), তাইয়েব (উত্তম) ছাড়া কিছু তিনি কবুল করেন না। আর আল্লাহ মুমিনদের সে আদেশই করেছেন যা রাসূলদের করেছেন। তিনি বলেছেন-

يٰٓأَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبٰتِ وَاعْمَلُوا صٰلِحًا ۖ إِنِّى بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ

হে রাসূলগণ, তোমরা আহার করো উৎকৃষ্ট হতে, আর নেক আমল করো; নিঃসন্দেহে তোমরা যা করে সে সম্পর্কে আমি সম্যক অবগত। (আল-মুমিনূন, ২৩ : ৫১)

তিনি আরো বলেছেন-

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبٰتِ مَا رَزَقْنٰكُمْ

হে ঈমানদারগণ, ঐ উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ হতে আহার করো যা রিযিকরূপে আমি তোমাদের দান করেছি। (আল বাকারাহ, ২: ১৭২)

তারপর তিনি একব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে (হজ্ব বা অন্য নেক উদ্দেশ্যে) দূরদারাজের সফর করে, ধূলিমলিন উসকোখুসকো অবস্থায়, আর আসমানের দিকে হাত তুলে বলে, ইয়া রাব্ব, ইয়া রাব্ব; অথচ তার পানাহার হারাম, লেবাস হারাম, আগাগোড়া হারাম দ্বারা সে প্রতিপালিত, তো কিভাবে তার দুআ কবুল হতে পারে?


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url