ছালাতের আসল গুণ খুশু-খুযু
ছালাতের মূল প্রাণ
কিয়াম, কিরাত, রুকু-সিজদা, তাছবীহাত, বৈঠক
ইত্যাদি হলো ছালাতের জিসম বা দেহ, অর্থাৎ বাইরের আকার-আকৃতি ও কাঠামো, কিন্তু
ছালাতের আসল গুণ বা মূল প্রাণ হলো খুশু-খুযু, যার অর্থ হলো ছালাতের মধ্যে
আল্লাহর প্রতি আত্মনিবেদিত ও একাগ্র হওয়া।
জায়নামাযে দাড়িয়ে যে ভাব আনতে হবে
আল্লাহু আকবার বলে
বান্দা যখন ছালাতে দাঁড়ায় তখন সে যেন ভাবে, আমি এখন বিশ্বজাহানের
শাহানশাহের দরবারে হাযির হয়েছি। যদিও আমি তাঁর পাক যাত ও
পবিত্র সত্তাকে দেখি না,
কিন্তু তিনি আমাকে দেখছেন, আমার ইবাদত ও ছালাত
দেখছেন। এ সম্পর্কে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
أن تعبد الله كأنك تراه، فإن لم تكن
تراه فإنه يراك
এভাবে আল্লাহর ইবাদত
করবে যেন তুমি তাকে দেখছো,
আর যদি তুমি তাকে না দেখো, তাহলে (অন্তত এটা ভাবো
যে,) তিনি তোমাকে দেখছেন।
(বুখারী, হাদীছে
জিবরীল, নং ৫০; মুসলিম, নং ৮)।
হাশরের ময়দানে সালাতের হিসাব
আরো ভাববে যে, আজ যে
ছালাত আমি আদায় করছি,
একদিন হাশরের ময়দানে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে এই ছালাতের
হিসাব আমাকে দিতে হবে।
এই ছালাত যদি তাঁর
দরবারে না-কবুল হয় তাহলে বরবাদি ছাড়া আর কিছু নেই। পক্ষান্তরে যদি তা তাঁর
দরবারে কবুল হয়ে যায় তাহলে আমি কামিয়াব। এই ছালাতের মাধ্যমেই তিনি আমার
জান্নাতের ফায়ছালা করবেন।
ভয়-ভীতির সঙ্গে সঙ্গে
আল্লাহ তা'আলার অসংখ্য নেয়ামতের কথা স্মরণ করবে এবং দিলের মধ্যে আল্লাহ তাআলার প্রতি
মুহব্বতের হালাত পয়দা করার চেষ্টা করবে।
তো এই ভয়-ভীতি, ভক্তি-মুহব্বত
ও একাগ্রতারই নাম হলো
‘খুশু-খুযু’ এবং এটাই হলো ছালাতের মূল প্রাণ ও
প্রাণশক্তি, যা মুমিনের ছালাত রূহানিয়াতের অতি উচ্চস্তরে নিয়ে যায়। এটা যখন হাছিল হয়ে
যায়, ছালাত তখন আসান হয়ে যায়, যেমন ইরশাদ হয়েছে
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ
وَالصَّلٰوةِ ۚ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخٰشِعِينَ
الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم
مُّلٰقُوا رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رٰجِعُونَ
আর তোমরা ছবর ও ছালাতের
মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো, আর ছালাত অবশ্যই কঠিন, তবে
খুশু-খুযূ'ওয়ালাদের জন্য নয়,
যারা বিশ্বাস করে যে, তারা আপন প্রতিপালকের সম্মুখীন
হবে এবং তাঁর কাছে ফিরে যাবে। (আল-বাকারাহ, ২: ৪৫ - ৪৬)।
সবচে’ মর্যাদাপূর্ণ সালাত
ছালাতের বাহ্যিক
আকার-আকৃতি সকল মুছল্লীরই প্রায় একরকম। কিন্তু খুশু-খুযু’-এর
তারতম্যের কারণে ছালাতে ছালাতে পার্থক্য হয়ে যায়। যে যত বেশী খুশূ-খুযূ' হাছিল
করতে সক্ষম হবে তার ছালাত তত বেশী ফযীলতপূর্ণ ও উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ হবে। এই উম্মতের
মধ্যে হযরত আবুবকর (রা.)-এর ছালাত ছিলো সবচে’ মর্যাদাপূর্ণ, কারণ
তাঁর ছালাতের
‘খুশূখুশূ ছিলো উম্মতের মধ্যে সবার চেয়ে বেশী।
ছালাতে যেভাবে খুশু-খুযু আসে
তো আমাদের ছালাতের
মধ্যে এই খুশু-খুযু কীভাবে আসতে পারে? এজন্য পেয়ারা নবী
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে বড় সুন্দর ও কার্যকর এবং খুব সহজে আমলযোগ্য
একটি নছীহত করেছেন,
যার মূল প্রতিপাদ্য এই, যখন তুমি ছালাতে দাঁড়াবে তখন
তুমি এমন ব্যক্তির মত দাঁড়াবে, যেন দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করছে এবং
এটাই হয়ত তোমার শেষ ছালাত।
হয়ত, এই
ছালাতের মধ্যেই,
কিংবা ছালাতের পরেই তোমার মউত এসে যাবে, আর
কোন ছালাত আদায় করার সুযোগ হয়ত তুমি পাবে না। এরূপ চিন্তা দ্বারা ইনশাআল্লাহ
অবশ্যই আমার ছালাতের মধ্যে খুশু-খুযু’এর আলাদা একটি কায়ফিয়াত
পয়দা হবে।
টেগ : ছালাত, সালাত,নামায, নামাজ, নামাজে খুশু খুযু, সালাতে খুশু খুযু, খুশু খুযু কি?