মধ্যপন্থী জাতি
নরম কিংবা চরমপন্থা নয়
وَكَذٰلِكَ
جَعَلْنٰكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَآءَ عَلَى النَّاسِ
এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী
জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি। [সূরা বাকারা :
১৪৩]
শরীয়ত ও বিবেক উভয়ই আপনার কাছে
ভারসাম্যতা দাবি করে। বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি নয়। নরম কিংবা চরমপন্থাও কাম্য
নয়।
সুখী হতে চাইলে মধ্যম পন্থা
অবলম্বন করুন
যে সুখী হতে চায়, তার উচিত নিজের আগ্রহ ও কামনাকে নিয়ন্ত্রণ করা; সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা সর্বাবস্থায়ই মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। কেননা, পরিস্থিতির প্রভাবে আচার-আচরণে বাড়াবাড়ি কিংবা অপরিমিত শিথিলতা
নফসের উপর জুলুম করার নামান্তর।
মধ্যম পন্থা সর্বাবস্থায়ই প্রশংসিত।
শরীয়ত নির্দিষ্ট এক মাপকাঠি নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। জিন্দেগীর ভারসাম্যতা ইনসাফের উপর
প্রতিষ্ঠিত।
যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, খাহেশাতের পিছনে পড়ে, সে সবচেয়ে বেশি পেরেশান থাকে। ছোট ছোট বিষয় তার কাছে খুব বড়
হয়ে দেখা দেয়।
আলোকিত দিকও তার কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন
মনে হয়। তার অন্তরে ঈর্ষা, কপটতা ও হিংসা-বিদ্বেষের
চতুর্মুখী লড়াই চলতে থাকে।
সে কল্পনা ও ভাববিলাসিতার আবর্তে
ফেঁসে যায়। কেউ কেউ তো এমনও ধারণা করতে শুরু করে যে, দুনিয়ার সকলেই তার বিরোধী। অন্যরা তাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার
জন্য ষড়যন্ত্র করছে।
তাদের কল্পনা তাদেরকে এই কুমন্ত্রণাও
দেয় যে,
পুরো দুনিয়াই তাদের বিরুদ্ধে দুরভিসন্ধি করছে। ফলে তারা সর্বদাই
দুশ্চিন্তা ও পেরেশানীর আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। এমনটা কেবল সে-ই করে, যে আত্মিক শক্তি থেকে বঞ্চিত ও ঐশী হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ।
يَحْسَبُونَ
كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ
প্রত্যেক শোরগোলকেই তারা নিজেদের
বিরুদ্ধে মনে করে।' [সূরা মুনাফিকুন
: ৪]
অতএব, মনকে আপন অবস্থায় থাকতে দিন। যে বিষয়ে অধিক আশঙ্কা করা হয়।
অধিকাংশ সময়ই তা বাস্তবতার রূপ ধারণ করে না।
আপনি যা ঘটার আশঙ্কা করছেন, তার সর্বাপেক্ষা অশুভ পরিণতির কথা মাথায় রাখুন। অতঃপর তা গ্রহণ
করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন। এভাবে আপনি সেসকল ওয়াসওয়াসা ও অলীক ধ্যান-ধারণা
থেকে বেঁচে যাবেন, যেগুলো কল্পিত
বিষয় ঘটে যাওয়ার আশঙ্কায় আপনার অন্তরে উদয় হয়েছিল।
অতএব, আপনার কাছে আমার অনুরোধ, প্রতিটি বিষয়কে তার বাস্তবতা ও প্রয়োজন অনুপাতে মূল্যায়ন করুন।
বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি নয়।
বরং ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করুন। কল্পনা ও অলীক ধ্যান-ধারণার পিছনে পড়বেন না।
ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা- উভয় ক্ষেত্রেই হাদীসে বর্ণিত মাপকাঠি সামনে রাখুন-
‘তোমার প্রিয়জনকে তুমি পরিমিত পরিমাণে ভালোবাস, কেননা হতে পারে এমন একদিন আসবে, যেদিন সে তোমার ঘৃণার পাত্রে পরিণত হবে।
আর যাকে তুমি ঘৃণা কর, তাকে সংযত পরিমাণে ঘৃণা কর। কারণ, হতে পারে এমন এক দিন আসবে, যেদিন সে তোমার প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়ে যাবে।’
মনে রাখবেন, অধিকাংশ শঙ্কা, আশঙ্কা ও গুজব বাস্তবতার রূপ ধারণ করে না।