যাকাত আদায়ের আজর-ছাওয়াব
সম্পদের মালিকানা একমাত্র আল্লাহর
وَآتُوهُمْ
مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي آتَاكُمْ
‘আর তোমরা তাদের দান করো আল্লাহর মাল থেকে, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন। [আন্-নূর, ২৪ : ৩৩]।
সুতরাং আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর মাল থেকে বান্দা যদি দান করে, বা যাকাত আদায় করে তাহলে তার আবার প্রতিদান ও পুরস্কার কিসের!
তবু তিনি তারই দেয়া মাল খরচ করার উপর বান্দাকে এমনভাবে পুরস্কার দান করার কথা বলেছেন; যেন দয়া ও ইহসান হাকীর-ফকীর বান্দার প্রতি আল্লাহর নয়, বরং কাদের-গনী আল্লাহর প্রতি বান্দার! সুবহানাল্লাহ! কত দয়াময়
তিনি!
দেখুন, বহু স্থানে
মালের মালিকানাকে আল্লাহ নিজের পরিবর্তে বান্দার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বলেছেন آموالكم তোমাদের মাল, آموالهم তাদের মাল।
একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ
যেমন স্নেহশীল পিতা তার সন্তানকে কিছু দিয়ে বলে, তোমার এ জিনিসটা থেকে আমাকে কিছু দাও, আমি তোমাকে আরো অনেক বেশ দেবো! সুবহানাল্লাহ! এমনকি আল্লাহ তো
একাধিক স্থানে ‘করয’ শব্দ ব্যবহার করেছেন
مَنْ
ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا
كَثِيرَةً ۚ وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
কে আছে যে আল্লাহকে করয দান করবে উত্তম কর, আর তিনি তাকে বাড়িয়ে দেবেন বহু গুণ! আর আল্লাহই (রিযিক) সম্প্রসারিত
করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন করানো হবে।
(আল-বাকারাহ, ২ : ২৪৫)
مَنْ
ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ وَلَهُ أَجْرٌ
كَرِيمٌ
‘কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম করয দান করবে, আর তিনি তাকে তা বাড়িয়ে দেবেন, আর তার জন্য রয়েছে মহান প্রতিদান!!' (আল-হাদীদ, ৫৭ : ১১)
যাকাতের প্রতিদান
সূরাতুল বাকারায় আল্লাহ
তা'আলা ইরশাদ করেন
مَثَلُ
الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ
أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ
يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের মাল খরচ করে, তাদের (মাল খরচ করার বাহ্যিক) উদাহরণ হলো একটি দানা, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে। প্রতিটি শীষে রয়েছে একশটি দানা; আর আল্লাহ তা'আলা যাকে ইচ্ছা করেন তাকে অনেক বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ তো প্রশস্ততার
অধিকারী সর্বজ্ঞ।' (সূরা
বাকারা আয়াত, ২৬১)
তো এটা নফল ছাদাকার ক্ষেত্রে যেমন তেমনি ফরয় সাদাকা তথা সাদকাতুল ফিতর ও যাকাতের
ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যাকাত ও সদকাতুল ফিতর আদায় করো বা নফল দান করো, সবই আল্লাহর রাস্তায় খরচ অন্তর্ভুক্ত। বরং ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, নফলের বদ্ধি নফলের মত, আর ফরযের বৃদ্ধি হবে ফরযের মত। অর্থাৎ একটি যাকত অন্তত সাতশটি
যাকাতের সমতুল্য হবে। তারপর কী পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হবে তা আল্লাহ তা'আলা নির্দিষ্ট করে বলেননি। সেটা তিনি নিজের ইলমে গায়বের মধ্যে
রেখে দিয়েছেন।
যাকাতের আজর-ছাওয়াব কি পরিমান!
তবে বান্দা যেন নিজের ক্ষুদ্রতার কারণে বৃদ্ধির পরিমাণকে নিজের মত করে ধারণা না
করে সে জন্য তিনি বলেছেন, আর আল্লাহ তো প্রশস্ততার অধিকারী। অর্থাৎ বৃদ্ধির পরিমাণকে তোমার সীমাবদ্ধ ধারণা
দিয়ে ভাবতে যেয়োনা; আমার ভাণ্ডারের ব্যাপ্তি ও প্রশস্ততা দিয়ে, বরং অসীমতা ও অফুরন্ততা দিয়ে ভাবতে চেষ্টা করো। আসলে আমার দানের পরিমাণ কত ব্যাপক ও বিস্তারিত তা তোমরা কখনো
কল্পনাও করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ!
তারপর বান্দা যেন মনে না
করে যে,
নাউযু বিল্লাহ, আমার দানের বিষয় যদি আল্লাহর ইলমে না থাকে! মুমিন তো এমন ভাববে
না,
ভাবতে পারে না, তবু আল্লাহ বান্দাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বলেছেন, তুমি যখন যেখানে যেভাবেই খরচ করো আমি তা জানবো। কোন কিছু আমার জানার বাইরে হতে পারে না। আসমান যমীনের কোন কিছুই
আমার কাছে গোপন থাকে না।