দুর্দশাগ্রস্তদের দেখে সান্ত্বনা লাভ করুন -ড.আয়ায আল ক্বরনী
আশপাশে তাকিয়ে দেখুন
আপনার ডানে বামে তাকিয়ে দেখুন। সব দিকেই
দুর্দশাগ্রস্ত ও হতভাগাদের মিছিল। প্রতিটিই ঘরেই হাঙ্গামা। প্রতিটি গালেই অশ্রু ।
প্রতিটি উপত্যকাতেই বিলাপ। কত বিপদ! কত মসিবত! আপনি দেখবেন, বিপদগ্রস্ত কেবল আপনি
একাই। নন। বরং অন্যদের তুলনায় আপনার বিপদ যৎসামান্যই।
অগণিত মানুষ কত কষ্টে আছে
কত রোগী বছরের পর বছর বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে; যন্ত্রণায় ছটফট করছে; সুস্থতা লাভ করতে পারছে
না! বহু মানুষ জেলখানায় বন্দী। তারা সূর্যের আলো দেখতে পারছে না। জেলখানার ভিতরটা
ছাড়া আর কিছুই জানে না। বহু নারীর কলিজার টুকরা সন্তান শৈশব, কৈশোর কিংবা যৌবনে
ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।বহু মানুষ পেরেশানীর পাহাড়ে চাপা পড়ে আছে। কতজন
ঋণগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত। আপনি তাদের
দেখে সান্ত্বনা লাভ করুন।
দুনিয়ার বাস্তবতা
আপনি সুনিশ্চিতভাবে জেনে রাখুন- ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য
জেলখানা।দুনিয়া দুশ্চিন্তা ও পেরেশানীর জায়গা।’ এখানে সকালের সমৃদ্ধ মহল
সন্ধ্যায় ধ্বংসস্তুপে। পরিণত হয়।
এখানে বহু ঘর এমন আছে, যাদের পরিবারের সকলেই মিলেমিশে একসঙ্গে আছে এবং সুস্থ
আছে। ধন-সম্পদ ও সহায়-সম্পত্তির কোনো অভাব নেই।
হঠাৎ মৃত্যু, ক্ষুধা, দারিদ্র, বিচ্ছেদ আর রোগ-শোক তাদের ঘিরে ধরে।
وَتَبَيَّنَ
لَكُمْ كَيْفَ فَعَلْنَا بِهِمْ وَضَرَبْنَا لَكُمُ الْأَمْثَالَ
‘আর তোমাদের জানা হয়ে
গেছে যে, আমি তাদের সঙ্গে কীরূপ
আচরণ করেছি এবং তোমাদের জন্য আমি দৃষ্টান্তও পেশ করেছি।' [সূরা ইবরাহীম : ৪৫]।
দুনিয়ার বাস্তবতায় নজেকে মানিয়ে নিন
আপনি নিজেকে বিপদ-আপদের জন্য এমনভাবে অভ্যস্ত করে নিন, যেমন উট মরুভূমিতে চলার
জন্য অভ্যস্ত হয়ে থাকে। জীবনের দীর্ঘ সফরে ভারসাম্য রক্ষা করুন। নিজের আশপাশ ও
পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্ত সামনে রাখুন। তাদের মাঝে ও আপনার মাঝে তুলনা করে দেখলে
বুঝতে পারবেন,
আপনি
তাদের তুলনায় অনেক ভালো আছেন। জীবন-পথে চলতে গিয়ে ধাক্কা খেলে ধৈর্য ধারণ করুন
এবং আল্লাহর শোকর আদায় করুন। যা তিনি নিয়ে গেছেন, তাতে সাওয়াবের আশা রাখুন এবং আশপাশের লোকদের দেখে
সান্ত্বনা হাসিল করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কষ্টের জীবন
দুনিয়াতে কষ্টে জীবন যাপনের ব্যাপারে আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বোৎকৃষ্ট উপমা। তাঁর মাথায় উটের ভুড়ি
চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে,
দেহ
মোবারক থেকে রক্ত ঝরেছে,
চেহারা
রক্তাক্ত হয়েছে,
সঙ্গী-সাথিসহ
তাকে সংকীর্ণ উপত্যকায় বন্দী করে রাখা হয়েছে, এমনকি গাছের পাতা খেতে বাধ্য হয়েছে, মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে
যেতে বাধ্য করা হয়েছে,
উহুদের
যুদ্ধে সামনের চার চারটি দাঁত শহীদ হয়েছে, তার পূতঃপবিত্র স্ত্রীর নামে অপবাদ রটানো হয়েছে, সাথি-সঙ্গীদের অনেককেই
শহীদ করা হয়েছে,
তার
সকল ছেলে ও অধিকাংশ কন্যাই তার জীবদ্দশাতেই ইন্তেকাল করেছেন, ক্ষুধার প্রচণ্ডতায়
পেটে পাথর বেধেছেন,
তাকে
জাদুকর, মিথ্যাবাদী, গণক, পাগল ইত্যাদি অপবাদ
দেওয়া হয়েছে,
যা
ছিল শারীকির কষ্ট থেকেও বেশি কষ্টকর।
নবীদের কষ্টের উপমা
হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামকে হত্যা করা হয়েছে।
হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামকে জবাই করা হয়েছে। হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে
বর্ণনাতীত কষ্ট দেওয়া হয়েছে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আগুনে নিক্ষেপ করা
হয়েছে।
সাহাবাদের কষ্টের উপমা
সাহাবায়ে কেরামও একই অবস্থার শিকার হয়েছেন।
কল্পনাতীত দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করেছেন। হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুকে রক্তে
রঞ্জিত করা হয়েছে। হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করা হয়েছে। হযরত আলী
রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বর্ষা নিক্ষেপ করা হয়েছে।
মুসলিম ইমাম ও মনীষীগনের কষ্টের উপমা
মুসলিম ইমাম ও মনীষীগণকে দোররা মারা হয়েছে; কয়েদখানায় বন্দী করা
হয়েছে। এমন কোনো কষ্ট ছিল না, যা তাদেরকে দেওয়া হয়নি।
أَمْ
حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ
خَلَوْا مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَآءُ وَالضَّرَّآءُ وَزُلْزِلُوا
“তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ
করবে, অথচ এখনও তোমাদের নিকট তোমাদের
পূর্ববর্তীদের অনুরূপ অবস্থা আসেনি? অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ তাদেরকে স্পর্শ করেছিল এবং
তারা ভীত ও কম্পিত হয়েছিল।' [সূরা বাকারা : ২১৪]