জামাআতের গুরুত্ব ও ফযীলত

 জামাআতের গুরুত্ব

পাঁচওয়াক্ত ফরয ছালাতের জন্য জামাআত হচ্ছে সুন্নাতে মুআক্কাদা, যা ওয়াজিবের কাছাকাছি। এ কথা অবশ্য ঠিক যে, কেউ যদি মসজিদে না যায় এবং জামাআতে শরীক না হয়, বরং নিজের ঘরে একা একা ছালাত আদায় করে নেয়, তাহলে ছালাতের ফরযিয়াত তো আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু ছালাতের নূর ও নূরানিয়াত এবং হাকীকত ও ফযীলত কিছুতেই হাছিল হবে না, বরং জামাআত তরক করার কারণে গোনাহগার হবে

আর জামাআত তরক করার অভ্যাস হয়ে যাওয়া তো মুনাফিক হওয়ার আলামত এবং জামা'আত তরককারীকে এমনকি ফাসিক ও ফাজির বলা হয়েছে।


জামাত তরককারীদের ব্যপারে রাসূল (সা.) এর হুশিয়ারী 

শরী'আতের দৃষ্টিতে জামা'আতের কী পরিমাণ গুরুত্ব এবং জামা'আত তরক করা কত বড় অপরাধ তা বোঝার জন্য শুধু এটা জানাই যথেষ্ট যে, একবার নবা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার ইচ্ছা হয় যে, একজনকে বলি যেন সে ছালাত পড়ায়, আর আমি লাকড়ি যোগাড় করে ঐ সমস্ত লোকদের ঘরে যাই যারা জামাআতে শরীক হয় না, (বরং ঘরেই ছালাত আদায় করে,) আর আমি তাদেরসহ তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেই। (মুসলিম, ছালাত, জামা'আতের ফযীলত, হাদীছ নং ৬৫১, তিরমিযি, হাদীছ নং ২১৭)

(এরপর সম্ভবত কোন বর্ণনায় একথা আছে, কিন্তু নারী ও শিশুদের কথা ভেবে আমি তা করতে পারি না।') সত্যি চিন্তা করার বিষয় যে, স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা যার সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন

وَمَآ أَرْسَلْنٰكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعٰلَمِينَ

আর আমি আপনাকে সমস্ত জগতের জন্য রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি। (আল-আম্বিয়া, ২১ : ১০৭)

 

উম্মতের জন্য যার দরদ-ব্যথা ও দয়া-মায়ার কোন সীমা ছিলো না তিনি উম্মতের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে চান! তাহলে তো বুঝতে হবে, যারা জামাআতে শরীক হয় না তাদের ঘরে অন্তর্গত দিক থেকে আগুন জ্বলতে থাকে।

তারা যেন নিজেরাই নিজেদের ঘরে তাদের নবীর হাতে আগুন লাগানোর ব্যবস্থা করছে। এজন্যই ঘরে ঘরে আজ এত অশান্তির আগুন। সুতরাং সাবধান! আমাদের অবশ্য কর্তব্য হলো জামা'আতের ইহতিমাম করা এবং মসজিদে হাযির হয়ে জামাআতের সঙ্গে ছালাত আদায় করা, এমনকি যদি কোন ওয়াক্তে কোন কারণে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে যেখানে সম্ভব সেখানেই যেন অন্তত দুজনের জামা'আত করে ছালাত আদায় করা হয়।


যেসব কারনে জামাতে শরীক না হয়ে ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি

বড় ধরনের কোন ওযর ছাড়া, যেমন খুব ঝড়-তুফান, ভীষণ অন্ধকার, শত্রর ভয়, কঠিন অসুস্থতা ইত্যাদি ওযর ছাড়া জামাআত তরক করা কোন মুমিন মুসলমানের কিছুতেই উচিত নয়। 


জামাআতের ফযীলত

জামাআতের ফযীলত সম্পর্কে একটি হাদীছ এই -

হযরত আবু হোরায়রা রা. হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বাড়ীতে এবং বাজারে আদায়কৃত ছালাতের চেয়ে জামা'আতের সঙ্গে আদায়কৃত বান্দার ছালাতের মরতবা পঁচিশ গুণ বেশী। আর তা এ কারণে যে, যখন সে অযু করে এবং উত্তমরূপে অযু করে, তারপর একমাত্র ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে বের হয়, তখন যতবারই সে পা তোলে তা দ্বারা তার জন্য একটি মরতবা বুলন্দ করা হয় এবং একটি গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যখন সে ছালাত আদায় করে সারে তখন ফিরেশতারা তার জন্য, যতক্ষণ সে মুছল্লায় থাকে এবং কোন কথা না বলে; শান্তির দুআ করতে থাকে, হে আল্লাহ, তার উপর শান্তি বর্ষণ করুন, হে আল্লাহ, তার প্রতি রহম করুন। আর যতক্ষণ সে ছালাতের ইনতিযারে থাকে ততক্ষণ সে ছালাতের মধ্যে বলে গণ্য হবে। 

(বুখারী, হাদীছ নং ৬৪৭)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url