ছালাত হোক ছালাতের মত
আমাদের কর্তব্য হলো ছালাতের হাকীকত এবং অন্তর্নিহিত মর্ম ও
সৌন্দর্য অনুভব করে ছালাত আদায় করা। জীবনভর চেষ্টা করে যেতে হবে যেন আমাদের ছালাত
নববী ছালাতের নিকট থেকে নিকটতর হতে থাকে; যেমন পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
صلوا
كما رأيتموني
أصلي
তোমরা পড়ো ছালাত যেমন দেখো আমাকে ছালাত পড়তে।
ছাহাবা কেরাম তো নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
জীবদ্দশায় তাঁর পিছনে ছালাত আদায় করেছেন। খুব নিকট থেকে তাঁকে তাঁরা ছালাত আদায়
করতে দেখেছেন। দেখে দেখে নিজেদের ছালাতকে নববী ছালাতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ করার
চেষ্টা করেছেন। ফলে তাঁদের ছালাত নববী ছালাতের কাছাকাছি হতে পেরেছিলো, বাইরের আকার-আকৃতিতে যেমন তেমনি ভিতরের গুণ
ও প্রকৃতিতে।
এখন প্রশ্ন হলো, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের صلوا (ছ্বল্লু) আদেশ তো শুধু
ছাহাবা কেরামের প্রতি ছিলো না; ছিলো যুগে যুগে কেয়ামত
পর্যন্ত আনেওয়ালা পুরা উম্মতের প্রতি। তাহলে পরবর্তী উম্মত এবং এ যুগের আমরা
কীভাবে দেখতে পাবো নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছালাত? কীভাবে আমাদের ছালাত হতে পারে নববী ছালাতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?
বস্তুত এই একটি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে
পরবর্তী উম্মতের বহু প্রশ্নের উত্তর এবং বহু সমস্যার সমাধান।
উত্তর এই যে, ছালাত দেখার সিলসিলা চলতে থাকবে। ছাহাবা কেরাম দেখেছেন নবী ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছালাত। তাদের ছালাত দেখেছেন তাবেঈনে কেরাম। ছাহাবা-ছালাতের
দর্পণে আসলে তাঁরা দেখেছেন নববী ছালাতেরই ছায়া। ফলে তাঁদেরও ছালাত হয়েছে নববী
ছালাতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাবেঈনে কেরামের ছালাত দেখেছেন তাবয়ে তাবেঈন এবং
তাদের ছালাত সম্পর্কেও একই কথা। এভাবে প্রত্যেক যুগের উম্মত দেখেছে পূর্ববর্তী
উম্মতের ছালাত, যাতে সেই ছালাতের
আয়নায় অবলোকন করা যায় নববী ছালাতের ছায়া। ফলে তাঁদেরও ছালাতে ঘটতো নববী
ছালাতের ছায়াপাত।
আমাদের কর্তব্য হলো এযুগের সেই সব ভাগ্যবান লোকদের ছালাত অবলোকন
করা যারা তাদের পূর্ববর্তীদের ছালাত অবলোকন করে নববী ছালাতের ছায়া গ্রহণের চেষ্টা
করেছেন।
ছালাত শুধু কিতাব পড়ে শেখার জিনিস নয়; ছালাত হচ্ছে যুগের আদর্শ মুছল্লী যারা
তাদের ছালাত দেখে শেখার জিনিস, যাতে আমাদের ছালাতও যুগ যুগের
নিরবচ্ছিন্ন সিলসিলার মাধ্যমে নববী ছালাতের নিকট থেকে নিকটতর হতে পারে।
দ্বিতীয়ত গভীর চিন্তাভাবনার মাধ্যমে ছালাতের হাকীকত ও মর্ম অনুধাবন করতে হবে। ছালাতের
আহকাম ও বিধান পড়ে পড়ে ও শুনে শুনে জানতে হবে এবং জানতে হবে ছালাতের ফাযায়েল ও
নূরানিয়াত, যাতে দিলের মধ্যে
ছালাতের আগ্রহ ও আকাঙ্খা জাগ্রত হয় এবং গভীর থেকে গভীর হয়।
শরীআতে আযানের বিধান এসেছে বান্দাকে ছালাত সম্পর্কে সতর্ক ও প্রস্তুত করার
জন্য। বান্দা যেন ছালাতের জন্য পূর্ণরূপে তৈয়ার হতে পারে বাহির থেকে এবং ভিতর
থেকে।
* যে মুমিন কোন ছাহাবীর দর্শনসৌভাগ্য লাভ করেছেন তাঁকে বলা হয় তাবেঈ, বহুবচনে তাবেঈন। আর যিনি কোন তাবেঈকে দেখেছেন তাকে বলা বলা হয় তাবয়ে তাবেঈন।