অনর্থক সময় অপচয়ের ভয়াবহতা


মানুষের কথা-কাজের প্রকারভেদ

মানুষ যত প্রকারের কথা বলে বা কাজ করে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে তা তিন প্রকার। 

(১) কল্যান কর বা লাভজনক, যার মাঝে দুনিয়ায় বা আখেরাতের উপকার থাকে। 

(২) ক্ষতিকারক, দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষতি রয়েছে। 

(৩) উপকারী ও নয় আবার অপকারিও নয়, যার মাঝে দুনিয়া-আখেরাতের লাভ-ক্ষতি নেই।

এই তৃতীয় প্রকার নিয়ে যদি চিন্তা করা হয় তাহলে দেখা যায় যে, এটাও প্রকারান্তে দ্বিতীয় প্রকারে অর্থাৎ ক্ষতিকারকে অন্তর্ভুক্ত। কেননা ঐ সময়টুকু যাতে বেহুদা কাজে সময় ব্যয় করা হয়, তাতে যদি একবার 'সুবহানাল্লাহ' বলা হতো,  তাহলে আমলের পাল্লা অর্ধেক পূূর্ণ হয়ে যেত। যদি অন্য কোনো লাভজনক আমল করা হতো, তাহলে গুনাহ সমুহের কাফফারা এবং পরকালে নাজাতের উসিলা কিংবা অন্তত দুনিয়ায় প্রয়োজনের ব্যাপারে চিন্তাহীন থাকার কারণ হতো।


অমূলক কাজে সময় অপচয়ের ক্ষতি 

মূল্যবান সময়টাকে অনুপকারী কাজে বা কথায় ব্যয় করার উদাহরণ এরূপ -

কাউকে এখতিয়ার দেয়া হলো যে, ইচ্ছে করলে তুমি স্বর্ণ-রৌপ্য ও মণি মুক্তার একটি খনি অথবা একটি মাটির ঢেলা নিতে পারো, সে যদি খনি পরিবর্তে মাটির ঢেলা তুলে নেয় তাহলে তার অনেক বড় ক্ষতি হলো। এই লোকসান খুব স্পষ্ট। এজন্যই হাদীস শরিফে আছে, যে ব্যাক্তি কোন মজলিসে বসে এবং উক্ত আল্লাহর যিকির না হয়, তবে কিয়ামতের দিন এই মজলিসের জন্য তার আক্ষেপ ও লজ্জার কারণ হবে।


"যে জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে না,

সে জ্ঞান অজ্ঞাতা।

যেই মজলিসে আল্লাহর যিকির নেই,

সেই মজলিস তার জন্য দুর্ভাগ্য।


অমূল্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ঐশ্বর্য। 

এ অমূল্য ধনভান্ডার প্রতি মুহূর্তে অর্থহীনভাবে ক্ষয় হতে চলেছে, 

আফসোস, শত আফসোস!! "


এজন্যই নিরর্থক কর্ম ও কথাকে এবং অনুপকারী বন্ধু-বান্ধবের মজলিসে বসাকে দূরদর্শী ব্যাক্তিগণ গুনাহের তালিকায় সংযুক্ত করেছেন। 

কিছু হাদীসের বর্ণনা থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়।

মুবাহ্ বা অনুপকারী কাজের ক্ষতি বিষয়ে দুটি হাদীস 

হাদীস শরিফে আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, " কোন ব্যাক্তির ইসলাম গ্রহণ সহী-শুদ্ধ হওয়ার একটি নিদর্শন হলো অনুপকারী কর্মসমুহকে পরিত্যাগ করা। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ্)


অন্য এক হাদীস শরিফে আছে একবার হযরত কাব বিন উজরাহ (রাযিঃ) কয়েকদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি লোকদের নিকট তার ব্যাপারে খোঁজ চাইলেন।  বলা হলো যে, তিনি অসুস্থ। নবী করীম (সাঃ) তার অবস্থা জানার জন্য তাশরিফ নিয়ে গেলেন। তার অবস্থা শোচনীয় দেখে তিনি ইরশাদ করলেন, কা'ব! তোমার জন্য সুসংবাদ। তখন তার মাতা বলে ফেললেন, হে কাব! তোমার জান্নাত নসীব হবে। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন যে, আল্লাহ তা'আলার ব্যাপারে কসম খেয়ে হস্তক্ষেপকারী সে কোন ব্যাক্তি? হযরত কাব (রাযিঃ) বললেন, তিনি আমার মাতা।  রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন তুমি কি জান? হয়তো কাব কখনো অপ্রয়োজনীয় কথা বলেছে। বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে কৃপণতা করেছে। কাজেই কারো সম্বন্ধে জান্নাতের ফয়সালা করার অধিকার কার আছে? 

এর বাহ্যিক মর্মার্থ হলো যে, অপ্রয়োনীয় কথা ও কাজের হিসাব নেয়া হবে এবং যে জবাবদিহির সম্মুখীন হবে তার নাজাত অনিশ্চিত। (ইয়াহইয়া-উল উলূম)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url