ধর্ষণ বিস্তারে সাতটি অন্যতম কারন ও প্রতিকার -শায়খ আহমাদুল্লাহ হাফি.
ধর্ষণের বিস্তারে জনমনে উদ্বেগ
মাথা ব্যাথার এক নতুন নাম 'ধর্ষণ'। বিগত বেশ কিছু দিন ধরে সারা দেশ জুড়ে ধর্ষনের মাত্রা অত্যান্ত ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুস্থ বিবেক সম্পন্ন যেকোন মানুষ এবং এদেশের সকল অভিভাবকদের মাথা ব্যথা ও উদ্বিগ্ন হওয়ার বড় কারণ আজ ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পাওয়া।
ধর্ষণের থাবা থেকে বৃদ্ধা বা শিশু পর্যন্ত কেউই রেহাই পাচ্ছেনা। এমনকি মানুষ থেকে পশু পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে ধর্ষকদের ঘৃণ্য আক্রমণে।
কেন আজ আমরা পশুর মতো অধম হয়ে যাচ্ছি বরং পশুর চেয়েও আরো নিচে নেমে যাচ্ছি? সে কারণগুলো আমরা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করব।
ধর্ষণ বিস্তারের অন্যতম সাতটি কারন
১। ধর্ষণের হার অত্যন্ত ভয়াবহ আকারে বাড়ছে এবং সেই সাথে অন্যায়-অনৈতিকতাও প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজে চরমভাবে বেড়েই চলেছে। এসব অপরাধ বেড়ে য়াওয়ার অন্যতম প্রধান মৌলিক কারণ হচ্ছে পারিবারিক শিক্ষার অভাব।
আমদের পরিবারগুলোতে বর্তমানে নীতি এবং আদর্শের শিক্ষার কোন গুরুত্ব নেই।
আমাদের প্রতিটি পরিবারের অভিভাবকরা চান তার সন্তান ভালো স্কুলগুলোতে পড়ুক, ভালো রেজাল্ট করুক, ভালো কলেজে চান্স পাক, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোক।
কজন অভিভাবক এমন আছেন যিনি চান যে, আমার সন্তান বা অধীনস্থ শিশু নীতি-আদর্শে বলিয়ান হয়ে বেড়ে উঠুক? সে একজন ভালো মানুষ হয়ে বেড়ে উঠুক? তার চরিত্র ফুলের মত হোক? সে চোর বা ধোঁকাবাজ না হোক, সে দুর্নীতি পরায়ন না হোক? কজন অভিভাবক এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে দেখে?
অভিভাবকরা নিজেরাই যখন অসংখ্য মন্দের সাথে জড়িত সেই আমরা কিভাবে আমাদের সন্তানের জন্য নীতি-নৈতিকতা শিক্ষার আশা করব? এ শূন্যতাটিই সমস্যার বড় কারণ।
আজ যেসব ধর্ষনের ঘটনা আমরা শুনছি, এর পেছনের কারণ খুঁজতে গেলে আমরা দেখব এসব ধর্ষকদের পারিবারিক শিক্ষার বড় অভাব ছিল।
একটি শিশুর ভালো-মন্দের শিক্ষার সূচনা হয় তার পরিবার থেকে। পরিবারের সন্তানদের প্রতি নিবিড় পরিচর্যা ও নৈতিকতার শিক্ষা প্রদান সমাজে চলমান ধর্ষণ ও সকল অনৈতিক কর্মকান্ড রোধে প্রধাণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বর্তমানে পারিবারিকভাবে নৈতিকতার শিক্ষা ও ধর্ম চর্চার অকাল চলছে, তাই সমাজে ধর্ষণসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। এসব রোধে পারিবারিক শিক্ষার বিকল্প নেই।
২। বর্তমানে আমাদের সমাজে ভালো মানুষের কোন মূল্য নেই। নীতি এবং আদর্শের কোন দাম নেই। এ কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ধর্ষকের মতো মানুষ তৈরি হচ্ছে।
সমাজে যারা অর্থ-সম্পদ, পদ-পদবী কিংবা পেশিশক্তির মাধ্যমে নিজের প্রভাব প্রতিষ্টিত করেছে, সমাজ তাদের সমীহ করে চলে। এর বিপরীতে যারা ভদ্র, সৎ ও ন্যায় পরায়ণ তাদের কোন মূল্য নেই।
একটা সময় ছিল, যখন সমাজে ভালো মানুষের মূল্যায়ন করা হতো। তাদের সম্মান করা হতো, তাদের ভালো চোখে দেখা হত।
ভালো মানুষদের প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলা, অপমান যদি কোন সমাজে চলতে থাকে তাহলে সেখানে খারাপ মানুষদের উৎপাদন বাড়বেই।
ধর্ষণসহ সকল অনৈতিকতা থামাতে নীতিবান ও ভালো মানুষদের অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে।
৩।ধর্ষন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম মৌলিক বড় কারণ হলো, আমাদের দেশে ও তথাকথিত আধুনিক দেশে নারী দেহকে নাটক, সিনেমা, নোবেল, পত্র-পত্রিকায়, মিডিয়ায় এবং বিজ্ঞাপনে অবাধ এবং অশ্লীলভাবে প্রদর্শন করা হয়। যার ফলে যুবক,পুরুষজন যৌন সুড়সুড়ি পান। এদের মধ্যে যারা দুর্বল চিত্তের বা অসুস্থ চিন্তার, তারা বিপদগামীতার পথে পা বাড়ায়।
যখন কোন অসুস্থ চিন্তার মানুষ টিভি স্কিনে কিংবা ওয়েবে বা অন্য কোথাও নারী দেহের অশ্লীল দৃশ্য দেখে এবং তার কাছে কামভাব চরিতার্থ করার কোন সুস্থ-স্বাভাবিক উপায় না থাকে, তখন সে হাতের নাগালে যাকে দূর্বল পায় তার উপর চড়াও হয়। আর এখান থেকেই ধর্ষনের সুত্রপাত।
অতএব আমাদের দেশে ধর্ষণের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে নারী দেহের অবাধ প্রদর্শনি একটি মৌলিক কারণ।
এসব অশ্লীলতাকে আমরা দূর করতে না পারলে ধর্ষণের হার আমরা কোন ভাবেই কমাতে পারবোনা।
৪। ধর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ার আরেটি অন্যতম কারণ হলো বিভিন্ন সিনেমা ও ফিল্মে ধর্ষনের চিত্রগুলোকে চিত্রায়িত করা। এতে করে অসুস্থ চিন্তার মানুষদের মাঝে ধর্ষণ একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে ধরা দেয়। ফলে তাদের মাঝে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য দুঃসাহস জাগ্রত হয়। এর মাধ্যমেও ধর্ষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫। ধর্ষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আরো একটি কারণ হলো, নারীর নিরাপত্তার অভাব। আমাদের অবকাঠামো ও সিস্টেমগত ত্রুটি।
স্কুল থেকে নিয়ে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত সব জায়গায় নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা। এ কারণে নারীরা নানা প্রকার যৌন নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হয় । কোন কোন সময় তা ধর্ষণ পর্যন্ত গড়ায়।
এসব কিছু হয় নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার ফলে। নারীকে যদি পুরুষদের থেকে পৃথক করা হত, কর্মক্ষেত্র, স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিসহ সকল স্থানে নারীদের জন্য আলাদা সুরক্ষিত ব্যবস্থা থাকতো তাহলে এ জাতীয় ঘটনা বহুলাংশে কমে যেতে।
সুতরাং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার কারণে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মত ঘটনা ঘটছে তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
৬। বর্তমানে আমাদের সমাজে বিবাহ অনেক কঠিন হয়ে গেছে এবং এর বিপরীতে বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক অনেক বেড়ে গেছে। অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক অধিকাংশ সময় ধর্ষণ পর্যন্ত গড়াচ্ছে এবং অজস্র নারীরা নিগ্রহের শিকার হচ্ছে।
বিবাহ যদি আমাদের সমাজে সহজ করা হয় এবং বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক কঠিন করা হয় তাহলে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা কমে যাবে।
৭। ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে এর কোন কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেই।
প্রচলিত আইনে যেটুকু শাস্তি আছে তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। যে কারণে ধর্ষকরা নির্ভয়ে ধর্ষণ করে বেড়াচ্ছে।
ধর্ষণের ঘটনা কমাতে ধর্ষকদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান অনুযায়ী শাস্তি বাস্তবায়ন হলে আল্লাহর হুকুমে ধর্ষণ কমে যাবে ইনশাআল্লাহ ।