আল্লাহর অবাধ্যতা দুনিয়া ও আখেরাতে অশান্তির মূল কারণ
গুনাহের ক্ষতি
গুনাহের কারনে দুনিয়া ও আখেরাতে যে সকল ক্ষতি হয় তার কোন হিসেব নেই। এখানে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।
যুগে যুগে আল্লাহর নাফরমানীর পরিণতি
কুরআন মাজিদে নাফরমান (আল্লাহর অবাধ্য) লোকদের বহু ঘটনা ও তাদের শাস্তির বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
একমাত্র নাফরমানীর কারনে ইবলিশ আসমান থেকে বিতাড়িত হয়ে জমিনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। তার আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়, রহমতের পরিবর্তে সে গজবে নিপতিত হয়।
নূহ আলাইহিস্ সালাম এর সময়ে কোন কারনে সমস্ত জগৎবাসী মহা প্লাবনে ডুবে মরেছিল?
আদ বংশের লোকজন ভীষণ ঘুর্ণিঝড়ে কেন ধ্বংস হলো?
বিকট গর্জনে ক্বওমে ছামুদ কলিজা ফেটে কেন নিপাত গেল?
লূত (আঃ) এর ক্বওমকে কেন আকাশে তুলে উল্টিয়ে জমিনে নিক্ষিপ করা হলো?
কওমে শোআইবের উপর কেন মেঘের সুরতে অগ্নি বর্ষিত হলো?
মহাপাপী ফিরআউন সদলবলে লোহিত সাগরে কেন ডুবে মরল?
সারা জীবনের সঞ্চিত ধন-সম্পদসহ কারুন কেনইবা মাটির নিচে ধ্বসে গেলো?
দুষ্টাচার ও পাপাচার বনী ইসরাইল বিভিন্ন আযাবে নিপতিত হয়ে কেনই ধ্বংস হয়ে গেলো? কখনো অত্যাচারী শাষকের কবলে, কখনো উঁকুন বেঙের উপদ্রবে, আবার কখনো ভীষণ তুফানে নিপতিত হয়ে শেষ পর্যন্ত শূকর এবং বানরেও পরণত হতে দেখা যায়।
এসব কি কারণে হয়েছিল? একমাত্র আল্লাহর নাফরমানীর কারনে উল্লেখিত ঘটনাগুলো সংগঠিত হয়েছিল।
এসব ঘটনার সার সংক্ষেপ আল্লাহ এভাবে বর্ণনা করেন
وَ مَا کَانَ اللّٰہُ لِیَظۡلِمَہُمۡ وَ لٰکِنۡ کَانُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ
আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর যুলম করবেন বরং তারা নিজেরা নিজদের ওপর যুল্ম করত। (সূরা আল আনকাবুত-৪০)
এখন চিন্তা করে দেখুন পাপিষ্ঠগন নিজেদের পাপের কারনে কতশত প্রকার আযাব ভোগ করেছিল।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল হতে বর্ণিত আছে, মুসলমান কর্তৃক সিসিলী দ্বীপ জয়ের দিন হযরত আবু দারদা (রাজি.) একাকী বসে কাঁদছিলেন। এটি দেখে হযরত জোবায়ের ইবনে নকীর (রাজি.) বললেন, আজ যখন ইসলাম ও মুসলমানদের আল্লাহ বিজয় দিয়ে সম্মানিত করেছেন, তখন আপনার কান্নার কি কারণ হতে পারে? তিনি উত্তরে বললেন, হে যোবায়ের, আফসোস! তুমি এ সহজ কথাটি বুঝতে পারলে না? যখন কোন জাতি আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে তখন তারা শাহী সিংহাসনের মালিক হয়েও কিরূপ বেইজ্জতি ও অপদস্ত হতে পারে। সিসিলী বাসীর এ শোচনীয় পরিণতি দেখেই আমি কাঁদছি।
পাঁচটি ভয়ানক পাপ ও তার ক্ষতি
একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, মানুষ পাপ কাজের কারণে প্রাপ্য রিজিক হতে বঞ্চিত হয়ে যায়। ইবনে মাজাহ গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, আমরা দশজন লোক রাসুলুল্লাহর (সাঃ) দরবারে উপস্থিত ছিলাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের লক্ষ্য করে বললেন, পাঁচটি ভয়ানক ব্যাপার হতে আল্লাহ তোমাদের হেফাজতে রাখুন। সে পাঁচটি কাজ হলো-
(১) কোন জাতির মধ্যে নির্লজ্জতার কাজ যখন ব্যাপকভাবে শুরু হবে তখন তাদের মাঝে প্লেগ রোগসহ এমন রোগ দেখা দিবে যা তাদের পূর্ব পুরুষগন কখনো দেখেনি।
(২) কোন জাতি ওজনে কম দিতে শুরু করলে তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে আর তারা অত্যাচারীর কবলে পড়বে।
(৩) কোন জাতি জাকাত বন্ধ করে দিলে রহমতের বৃষ্টি হতে তারা বঞ্চিত হবে। পশুপাখি না থাকলে তাদের উপর এক ফোটাও বৃষ্টি বর্ষিত হবেনা।
(৪) কোন জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ শুরু করলে ভিন্ন কোন দুষমন তাদের উপর বিজয়ী হয়ে তাদের সব ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করে নেবে।
(৫) ইবনে আবিদ্দুনয়া বর্ণনা করেন এক ব্যাক্তি আম্মাজান হজরত আয়েশা (রাদিআল্লাহু) এর খেদমতে ভূমিকম্পের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন, মানুষ যখন জিনা করাকে জায়েজ কাজের ন্যায় প্রকাশ্যে করতে থাকে ও মদ্যপান এবং গান-বাদ্য শুরু করে তখন আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে জমিনকে কম্পমান হতে আদেশ করেন।
ইমাম আহমদ (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তা'আলা বনী ইসরাঈলদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমার ইবাদত করলে আমি সন্তুষ্ট হই। আমি যখন সন্তুষ্ট হই, বরকত দান করি এবং আমার বরকতের কোন সীমা নেই। পক্ষান্তরে আমার নাফরমানী করা হলে আমি রাগান্বিত হয়ে অবাধ্য ব্যক্তির উপর নালত বর্ষণ করে থাকি আর সে নালতের তাছীর সাত পুরুষ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে।
শেষ আরজি
আল্লাহর নাফরমানী থেকে আমাদের ফিরে আসা উচিত। যদি কখনো আল্লাহর নাফরমানী বা পাপ হয়ে যায়, সাথে সাথে তওবা ইস্তেগফারের মাধ্যমে ফিরে আসার ধারা অব্যাহত রাখা দরকার।
আল্লাহ আমাদের তাঁর প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করুন ও আমাদের গুনাহমুক্ত সুন্দর জিন্দেগী দান করুন (আমীন)।