দারুল উলূম কী? দারুল উলূম দেওবন্দ কী?
দারুল উলূম কী?
দারুল উলূম হচ্ছে, বিদ্যানিকেতন, ইলমের আঙ্গিনা, জ্ঞানের আধার, বিজ্ঞানের সরোবর। প্রত্যেক মুসলমানের উপর অবধারিত ফরয
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَۃٌ
এর দায়িত্ব আদায়ের অঙ্গন। শেখার ফরয দায়িত্ব আদায়ের অঙ্গন, শেখানোর ফরয দায়িত্ব আদায়ের অঙ্গন। মুমিনের উপর অর্পিত গুরুদায়িত্ব ফরয আমলগুলো কী কী তা জানার ফরয দায়িত্বের অঙ্গন।
খালেককে খালেক হিসাবে জানার, মালিককে মালিক হিসাবে জানার একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ইলমে ওহি চর্চার অঙ্গন।
মানবসৃষ্টির মূল রহস্য কী? তা জানার একমাত্র অঙ্গন।
মানব জীবনের ব্যবস্থাপত্র কী? মানবদেহের ওষুধ কী? পথ্য কী? তা জানার একমাত্র অঙ্গন। মানবাত্মার ওষুধ কী আর পথ্য কী? তা জানার একমাত্র অঙ্গন। মৃত্যুর আগে কী ছিল, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কেমন থাকতে হবে, আর মৃত্যুর পর অনন্তকাল পর্যন্ত কী হবে? তা জানার একমাত্র টেকসই আঙ্গিনা।
মানবপ্রবাহের কল্যাণ কোথায় আর অকল্যাণ কোথায়? তা জানার একমাত্র আধার। ওষুধ কী আর বিষ কী? তা পার্থক্য করার যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যম। বন্ধু কে আর শত্রু কে? তা চেনার একমাত্র আঙ্গিনা।
সভ্যতা, আধুনিকতা, সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা, সংস্কার, চলমান পৃথিবীর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারা, অসভ্যতা ও লাম্পট্যের টুটি চেপে ধরতে
পারা, হীন স্বার্থের জন্য হানাহানির লাগাম টেনে ধরতে পারা, ক্ষমতার মোহ থেকে নিবৃত করা, প্রতিটি সৃষ্টির হক তার হাতে পৌঁছে দেওয়া, জালিমের ঘাড় চেপে ধরা, মাজলুমের হাত ধরা, বদমাশদের রক্তচক্ষুকে উপড়ে ফেলা, সকল প্রকারের হকদারের কাছে হক পৌঁছে দেওয়া যে প্রতিষ্ঠান শেখায় তাকে বলা হয় দারুল উলূম।
মানবতা আর পশুত্ব, শান্তি আর অশান্তি, সাম্প্রদায়িকতা আর অসাম্প্রদায়িকতা, আলো আর অন্ধকার, প্রগতি আর পশ্চাদপদতা, স্বাধীনতা আর দাসত্ব, ইনসাফ আর জুলুম, ন্যায় বিচার আর স্বৈরাচার, মালিক আর চোর-ডাকাত, সাদা দিলের মানুষ আর লম্পট-বদমাশ এবং সর্বোপরি মানুষ ও অমানুষ চেনার একমাত্র এবং একমাত্র অঙ্গন হচ্ছে দারুল উলূম।
দারুল উলূম হচ্ছে, একজন মানুষ মানুষ হওয়ার জন্য মন্ত্রী হওয়া জরুরী না কি মুসলমান হওয়া জরুরী? তা জানার আঙ্গিনা। মুসলমান না হয়েও একজন মানুষ মানবতাবাদী হতে পারে কি না? মুসলমান না হয়েও কেউ শান্তিবাদী হতে পারে কি না? মাগযূব আলাইহিম ও দ্ব-ললীন হয়েও কেউ শান্তির বার্তাবাহক হতে পারে কি না? সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদনকারী ‘মহামান্য’ হতে পারে কি না? ‘নাজাস’ ও নাপাক হয়েও কেউ ‘মহামান্য’ ও ‘মহোদয়’ হতে পারে কি না? -এসব কিছু জানার একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান এবং একমাত্র বিদ্যাপীঠের নাম হচ্ছে ‘দারুল উলূম’ বা ইলমের আঙ্গিনা।
দারুল উলূম দেওবন্দ কী?
দারুল উলূম দেওবন্দ হচ্ছে, একটি দারুল উলূম বা ইলমের আঙ্গিনা যত গুণে গুণান্বিত হয়ে থাকে এবং যতগুলো বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে জন্ম লাভ করে এবং বেড়ে ওঠে -বললে আশা করি অত্যুক্তি হবে না যে- সেসকল গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ইলমের একটি সরোবরের নাম হচ্ছে ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’।
দারুল উলূম দেওবন্দ সেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়েই জন্ম লাভ করেছে, পথ চলা শুরু করেছে এবং কালের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চলেছে।
কোন নিন্দুক যদি ব্যক্তিবিশেষের দুর্বলতা দিয়ে বা কোন অনাকাঙ্খিত ভুলের বাহানা দিয়ে দারুল উলূম দেওবন্দকে খাট করতে চায় তাহলে তা তার দুর্ভাগ্য। দারুল উলূম দেওবন্দ আপন আলোয় উদ্ভাসিত। স্বার্থের জন্য হয়তোবা কেউ দারুল উলূম দেওবন্দকে নিজের স্খলিত চিন্তার খাঁচায় আবদ্ধ করতে চাইবে, বা এ আলোর মিনারে টেক লাগিয়ে নিজের সাময়িক হীন মতলব উদ্ধার করে নিতে চাইবে। কিন্তু কাসেমী সন্তানদের চোখকে তারা কখনো ফাঁকি দিতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
দারুল উলূম দেওবন্দ এবং তার মানহাজ জন্মলগ্ন থেকেই তার সন্তানদেরকে সেসব কথাই শিখিয়ে আসছে যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে বলেছেন, সেসব কথাই শিখিয়ে আসছে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা জীবনব্যাপী সাহাবায়ে কেরামকে শিখিয়েছেন।
শরীয়তের সেসব সিদ্ধান্তই বিলি করে চলেছে যা মুজতাহিদ, মুফাসসির ও মুহাদ্দিসগণ কুরআন ও হাদীসের আলোকে উম্মতের জন্য
সাজিয়ে দিয়ে গেছেন। কুরআন, তাফসীর, হাদীস ও ফিকহের কিতাবে যে ইলমের কথা বলা হয়েছে, যে ইলমের ফযীলত, বিধান ও অপরিহার্যতা তুলে ধরা হয়েছে, দারুল উলূম দেওবন্দ সে ইলমের জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সে ইলমই শিক্ষা দিয়ে চলেছে। এরই নাম দারুল উলূম। এরই নাম দারুল উলূম দেওবন্দ। এরই নাম ইলমের আঙ্গিনা। এরই নাম বিদ্যানিকেতন। এরই নাম ফরয ইলমে ওহির স্বচ্ছ সরোবর। এ আঙ্গিনার কাজ ইলমের ফরয দায়িত্ব পালন করা। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এ আঙ্গিনা অপরিহার্য। এ ইলমকে যে ঐচ্ছিক মনে করবে, হীন মনে করবে, গায়রে জরুরী মনে করবে, পশ্চাদপদ মনে করবে সে মুসলমান থাকার কোন সুযোগ নেই।
দারুল উলূমের ‘উলূম’ শব্দটি এ দিকে ইঙ্গিত করে যে, একজন মুসলমানের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল ইলমের যিম্মাদার এ মাদরাসা বা দারুল উলূমসমূহ। সর্বযুগের দারুল উলূমগুলো এবং সবশেষে দারুল উলূম দেওবন্দও এ কথাই জানে, এ বিশ্বাসই লালন করে। ঈমানের সাতাত্তর শাখার প্রত্যেকটি শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্বএ সকল দারুল উলূমের।