ওমরাহর মধ্যে আমরা কি কি কাজ করবো?
প্রশ্ন: ওমরাহর মধ্যে আমরা কি কি কাজ করবো?
উত্তর: এক নজরে ওমরাহর মধ্যে করণীয় কাজ সমূহ: ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোঁফ, চুল, নখ, বগল ও নাভীর নীচে ক্ষৌরকর্ম সমাপনের পর গোসল করে পরিষ্কার হয়ে ইহরামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। গোসল করা সম্ভব না হলে ভালভাবে অজু করে নিবে।
আতর জাতীয় সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারলে ভাল। মীকাত অর্থাৎ ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান হতে ওমরাহ’র নিয়তে ইহরাম বাঁধতে হবে।
ফরজ সালাতের সময় হলে ফরজ সালাতের পরে আর ফরজ সালাতের সময় না হলে দু’রাকাত নফল সালাত আদায় করে মুখে ‘লাব্বাইকা বি-উমরাতিন’ বলে ওমরাহ’র নিয়ত করে নিবে অথবা সম্ভব হলে আরবীতে এ নিয়ত করবে:
ওমরাহ’র নিয়ত |
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ، وَالنِّعْمَةَ، لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ
উচ্চারণ: “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিঅ’মাতা লাকা ওয়াল মূলক, লা শারীকা লাকা।”
অর্থ: “আমি হাজির, হে আল্লাহ ! আমি হাজির, আমি হাজির, তোমার কোন শরীক নেই। আমি হাজির, নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, আর সকল ক্ষমতা তোমার, তোমার কোন শরীক নাই।”
তালবিয়া পুরুষগণ জোরে জোরে ও মহিলাগণ আস্তে আস্তে পাঠ করবে। কাবা শরীফ পৌঁছার পর সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ পাথর চুমু দিয়ে তা সম্ভব না হলে হাতে স্পর্শ করে তাও সম্ভব না হলে হাতে ইশারা করে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকরাব’ বলে তাওয়াফ শুরু করবে এবং কাবার চতুর্দিকে সাতবার চক্কর দিবে। প্রতি তওয়াফে ‘রুকনে ইয়ামানী’ ও ‘হাজরে আসওয়াদে’র মাঝখানে নিন্মের দোয়াটি পাঠ করবে:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: “রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা আযাবান্ নার।”অর্থ: “হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।” [ সুরা বাকারা ২:২০১ ]
وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى
উচ্চারণ: “অত্তাখিজূ মিম মাকামি ইবরাহীমা মুসাল্লা।” অর্থ: “তোমরা ‘মাকামে ইবরাহীমকে’ সালাতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করা।”
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ
উচ্চারণ: “ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওতা মিন শাআইরিল্লাহ।”অর্থ: “নিশ্চয় সাফা- মারওয়া পাহাড় আল্লাহর নিদর্শণাবলীর মধ্য থেকে অন্যতম নিদর্শণ।”
ابدا بما بدأ الله به
উচ্চারণ: “আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহী”।
অর্থ: “ আল্লাহু (সুব:) যেভাবে শুরু করেছেন আমিও সেভাবে শুরু করছি।”
সাফা পাহাড়ে উঠে কিবলার দিকে মুখ করে এই দু’আ পাঠ করবে:
لااله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير لا اله الله
وحده انجز ؤعده ونصر عبده وهزم الاحزاب وحده
উচ্চারণ: “ লা ইলাহা ইল্লাহু, অহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুলি- শাই ইন কাদীর,। লা ইলাহা ইল্লাহু, অহদাহু আনজাযা ওয়া’দাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু ,ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু”।
অর্থ: “ আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক। তার কোন শরীক নেই। সকল ক্ষমতা তার, এবং সকল প্রশংসার উপযুক্ত তিনিই, তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তিনি তার ওয়াদা পূর্ণ করেন, তাঁর বান্দাদের সাহায্য করেন এবং একাই সম্মিলিত দুশমন বাহিনীকে পরাজিত করেন।”
এই দু’আ তিনবার পাঠ করবে।
তারপর ইবাদতের নিয়ত করে সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফায় এভাবে সাতবার সায়ী করবে। সাফা থেকে শুরু হবে, মারওয়ায় গিয়ে শেষ হবে। অনেকে ভুল করে সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে পুনরায় সাফা এসে একবার সায়ী’ হয় বলে মনে করে। এটা ভুল। বরং সাফা থেকে মারওয়া গেলেই একবার সায়ী পূর্ণ হয়ে যাবে।
মারওয়া পাহাড়ে ঐ আমলগুলোই করবে যা সাফা পাহড়ে করেছিলো। আবার মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত এলে আরেকবার পূর্ণ হয়ে যাবে। এভাবে মারওয়া গিয়ে শেষ হবে। সাফা-মারওয়ার মাঝ পথে দুই সবুজ চিহ্নের মধ্যবর্তী স্থানে পুরুষগণ জোরে দৌড়াবে, মহিলাগণ স্বাভাবিকভাবে হাঁটবে। এবং এই দু’আটি পাঠ করবে:
رب اغفر وارحم انك انت الاعز الاكرم
উচ্চারণ: “রাব্বিগ ফির ওয়ারহাম ওয়া ইন্নাকা আন্তাল আআ’জ্জুল আকরাম।”
অর্থ: “হে আমার রব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার উপর দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহা ক্ষমতাবান এবং সম্মানিত।”
সায়ীর জন্য নির্ধারিত কোন দু’আ নেই। সায়ী সমাপ্ত হলে মাথা মুণ্ডানো বা মাথার চুল ছোট করে ছেঁটে নিতে হবে। এরপরই ওমরাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং ইহরামের পরে যা হারাম ছিল তা হালাল হয়ে যাবে।