হজ্জ এবং ওমরা‘র সফরে আচরণ বিধি ও লক্ষনীয় বিষয় সমূহ
হজ্জের সফরে আচরণ বিধি
হজ্জ যাত্রীগণ আল্লাহর মেহমান। সকলেরই গন্তব্য বায়তুল্লাহ শরীফ। উদ্দেশ্য আল্লাহর আহবানে সাড়া দেওয়া। কিন্তু হজ্জের সফর একটি কষ্টের সফর। একদিকে অর্থ ব্যয় হয়, অপর দিকে শ্রম। আবার প্রত্যেক হাজী সাহেব নিজ নিজ অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। স্বচ্ছল, ধনী। কেননা গরীবের উপর হজ্জ ফরজ নয়। বেশীর ভাগ হাজী নিজে কোন ভারী কাজ-কর্ম করায় অভ্যস্ত নন। অথচ এখানে নিজেকেই সবকিছু করতে হবে। তারপর সফরের কষ্ট তো আছেই। মেজাজ থাকে গরম।
সাথী-সঙ্গীদের সাথে বাগ-বিতণ্ডা ও ঝগড়া-ফাসাদ হওয়ার বহু কারণ সামনে এসে যায়। সে কারণে আল্লাহু (সুব:) অন্য কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে কুরআনের আয়াত দ্বারা ঝগড়া-ফাসাদ করতে নিষেধ করেন নাই। কিন্তু হজ্জের বেলায় আল্লাহ (সুব:) সরাসরি ঝগড়া করতে নিষেধ করেছেন।
ইরশাদ হচ্ছে: অর্থ:-
فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ
“অতএব এই মাসসমূহে যে নিজের উপর হজ আরোপ করে নিল, তার জন্য হজে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়।” (সুরা বাক্বারা: ১৯৭)
এ আয়াতে ঝগড়া না করার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা হজ্জের সফরে বিভিন্ন চরিত্রের, বিভিন্ন মেজাজের, বিভিন্ন অভ্যাসের মানুষের সাথে একত্রে চলতে গিয়ে ঝগড়া-ফাসাদের বহু কারণ সামনে এসে যায়। সে কারণেই এভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
তাই হজ্জের সফরে সকল হাজী সাহেবদের নিন্মোক্ত বর্ণিত নিয়মগুলো মেনে চলা উচিৎ :
১. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর মেহমান হিসেবে যাচ্ছেন সেই আনন্দে শান্ত মেজাজে বের হউন।
২. প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা সঙ্গে নিন। যেন নিজের প্রয়োজন মত ব্যয় করে অন্যদেরকেও কিছু সাহায্য করতে পারেন। চা-নাস্তা খাওয়াতে পারেন। গরীব-দুঃখী, অসহায়কে সাহায্য করতে পারেন।
৩. হজ্জ শ্রম সাধ্য আমল। যতদুর সম্ভব নিজেকে তৈরী রাখুন। আপনি আল্লাহর মেহমান। দুনিয়ার কোন মেজবান তার মেহমানকে কষ্ট দেয় না। আপনিও যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহর মেহমান হতে পারেন তাহলে আপনার কোন কষ্ট হবে না। সৎ সাহস রাখুন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। কোন মানুষের উপর নির্ভরশীল হবেন না।
৪. মাল-সামান হাল্কা রাখুন। মনে রাখবেন আপনার মাল-পত্র আপনাকেই বহন করতে হবে। আপনার সাথী-সঙ্গী প্রত্যেকের’ই নিজ নিজ সামান রয়েছে। কেউ আপনাকে সহযোগিতা করতে পারবে না। আমাদের অভিজ্ঞতা হলো “যে যত দুর্বল, তার মাল-সামান তত বেশী।”
৫. সাথী-সঙ্গীদেরকে সম্মানের চোখে দেখুন। তাদের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভূল-ত্রুটিগুলো সুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন। তাদের সঙ্গে রাগান্বিত ও আক্রমনাত্মক কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকুন। অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, গল্প-গুজব, নিজ জীবনের কিচ্ছা-কাহিনী বলা থেকে বিরত থাকুন।
৬. কারো নিন্দা করা, পিছনে দোষ চর্চা করা, হিংসা করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, কারো দোষ খুজে বের করা, সমালোচনা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। কারণ এতে আপনার আমল নষ্ট হয়ে যাবে।
৭. কোন বদ অভ্যাস থাকলে বর্জন করুন। যেমন: ধুমপান করা, সাথী-সঙ্গীদের সামনে বসে দাঁত খিলাল করা, নাক পরিস্কার করা, যেখানে সেখানে থুথু নিক্ষেপ করা, থাকার জায়গা অপরিস্কার রাখা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।
৮. টাকা-পয়সা, মূল্যবান মাল-সামান সাবধানে রাখুন। মনে রাখবেন! মক্কাতেও চোর, পকেটমার ও প্রতারক থাকে।
৯. হজ্জের পূর্বে বেশী কেনা-কাটা, বারবার ওমরাহ করা থেকে বিরত থাকুন। অবশ্য হজ্জের পরে প্রয়োজনীয় কেনা-কাটা করতে পারেন।
১০. সাথী-সঙ্গীদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করার মানসিকতা প্রস্তুত -রাখুন। জেনে রাখবেন! আল্লাহর মেহমানদের সেবা করলে আল্লাহর সেবা করা হয়।
১১. ফল-ফলাদী বেশী খান। তবে আঙ্গুর ফল এবং জুস পান করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। বেশী জুস খেলে পেট লুজ হতে পারে।
১২. জরুরী ঔষধ-পত্র সঙ্গে রাখুন। কঠিন কোন রোগ থাকলে দু’একজন সাথীসঙ্গীকে বলে রাখুন।
১৩. আপনার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন যারা সৌদি আরবে চাকুরী করে তাদের দেয়া হাদিয়া-তোহফা, ফল-মুল বেশী খাবেন না। তাহলে কিন্তু হাত ব্যথা হয়ে যাবে। ব্যাপারটা বুঝতে পারেন নাই? ওরা আপনাকে আসার সময় বিভিন্ন মাল-সামানা দিয়ে দিবে, তাদের বাড়ি পৌছানোর জন্য। যা আপনার জন্য কষ্টের কারণ হবে।