রিজিকে থাকলে না খেয়ে উপায় নেই | একটি সুন্দর গল্প


রিজিকে থাকলে না খেয়ে উপায় নেই | একটি সুন্দর গল্প

মানুষের রিজিক অবশ্যই তার কাছে আসবে। শর্ত এই যে, সে আল্লাহর ইবাদাতে নিজেকে উৎসর্গ করে দেবে। এই তথ্যটি এক ব্যক্তি ওয়াজ মাহফিল থেকে এই ভাবে শুনেছিল যে, তকদীরে রিজিক থাকলে তা অবশ্যই মানুষকে খেতে হবে। না খেতে চাইলে জোর করে খাওয়ানো হবে।  এমনকি জুতা মেরে হলেও আল্লাহ খাওয়াবে। 

এই কথা শোনার পর থেকে লোকটি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো- এটা কি করে সম্ভব?। আমি যদি না খাই, তাহলে আল্লাহ কেমন করে খাওয়াবে একবার দেখি। সুতারাং সে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিল।
তার মা তাকে রান্না করা খাবার এনে সামনে দিল। কিন্তু  সে খেলো না। তার মা বললো, “খাও”।
সে আরো জোরে বললো, ‘খাবো না’।

এভাবে বারবার প্রত্যাখ্যান করার পর মা চিন্তিত হয়ে পড়লো। আমার একমাত্র জোয়ান ছেলে। যদি না খেয়ে মারা যায়তবে ছেলে কোথায় পাবো? যখন সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো তখন সে পাড়ার ছেলেদের ডেকে পরামর্শ করলো কিভাবে তাকে খাওয়ানো যায়। সবাই বললো “তাকে চিৎ করে শুইয়ে জোর করে মুখে গুঁজে দেওয়া উচিৎ”। 

অবস্থা বিপদজনক দেখে লোকটি বাড়ী ছেড়ে পালালো।
মা তার পিছু চাড়লো না। ছেলেকে খুঁজতে লোক পাঠালো। খুঁজতে খুঁজতে লোকজন গিয়ে দেখে লোকটি এক বিশাল জঙ্গলে গাছের ডগায় উঠে লুকিয়ে আছে।
        লোকজন তাকে ডাকলো, “নেমে এসো, তোমার মা ভাত খেতে ডাকছেন।”
লোকটি সজোরে বললো, “না, আমি ভাত খাবো না।” অগ্যতা লোকজন বাড়ি ফিরে গেল। কিন্তু মা না-ছোড় বান্দা। আবার লোকজন নিয়ে পরামর্শ করলো। সবাই বললো, “জোর করে ওকে খাওয়ানো যাবে না। বরং খুব সুস্বাদু খাবার রান্না করে গাছের নীচে রেখে আসতে হবে। ক্ষুধার সময় খাবারের সুগন্ধ পেলে পাছ থেকে নেমে এসে গোপনে খেয়ে নিতে পারে।”

সুতারাং হাঁড়ি ভরে সুস্বাদু পোলাউ রান্না করা হলো। গাছের নীচে গিয়ে হাঁড়ির ঢাকনা খুলে রেখে সবাই চলে আসলো। 
কিন্তু লোকটি অটল। সে কিছুতেই খাবে না। গাছের আগায় চুপ করে বসে থাকলো। 

এদিকে একদল চোর সারা রাত চুরি করার পর সকাল বেলা ঐ জঙ্গলে প্রবেশ করলো। এখানে তারা চুরির মাল ভাগাভাগি করবে। কিন্তু জঙ্গলে ঢুকেই তারা পোলাউয়ের সুন্দর খুশবো পেলো।ব্যাপার কি? চোরের দল খুশী হয়ে পোলাউ কেতে গেল। চোরের সর্দার ধমক দিয়ে বললো, “খবরদার কেউ পোলাউ খেয়ো না। আশে পাশে নিশ্চয় কোন মানুষ লুকিয়ে রয়েছে। এই  খাবারের সঙ্গে বিষ মাখানো আছে। আমাদের এই ভাগ বাটোয়ারার জায়গাটি কেউ  সন্ধান পেয়ে গেছে। এই বিশ খেয়ে যখন আমরা মারা যাবো তখন আমাদের মালপত্র নিয়ে সে চম্পট দিবে।”

সর্দারের এই কথা শোনে চোরের দল ভয় পেয়ে গেল। তারা মানুষটির খোঁজ করতে লাগলো। দেখলো গাছের আগায় একটা লোক বসে আছে।সবাই মিলে গাছটিকে ঘিরে দাঁড়ালো। যেন লোকটি পালাতে না পারে। সর্দার লোকটিকে নামিয়ে হাঁড়ির সামনে নিয়ে বললো, “এই পোলাউ খাও।” 
লোকটি সজোরে বললো, “না আমি খাব না।”

“ব্যাটা খাবারে বিষ মিশিয়ে আমাদের মারার জন্যে ফাঁদ পেতে রেখেছে আবার বলছে খোবে না” --বলেই সর্দার পা থেকে জুতা খুলে নিয়ে লোকটির মাথায় মারতে লাগলো-- খা, শিগগির খা!”
জুতার মার খেয়ে মনে পড়ে গেল সেই ওয়াজের কথা, তাকদীরে রিজিক থাকলে আল্লাহ জোর করে এমনকি জুতা মেরে হলেও খাওয়ান। লোকটি নিশ্চিত মনে তখন আল্লাহ পাকের অমূল্য নেয়ামত খেতে লেগে গেল।

লোকটি হয়তো আল্লাহর জন্যে কোনভাবে নিজেকে উৎসর্গ করে রেখেছিল তাই এভাবে দূনিয়া তার পিছনে ছুটে এসেছে।
হাদীছে আছে, যে ব্যাক্তি আল্লাহকে ছেড়ে দুনিয়ার পিছনে ছুটে বেড়ায় দুনিয়া তাকে ধরা দেয় না, আল্লাহকেও সে হারায়। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর পিছনে ছুটে যায় সে আল্লাহকে পায়।েএবং দুনিয়াও তার পিছনে পিছনে ছুটে আসে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url