স্বার্থ রক্ষায় গুজব ছড়ানো এক লোভী মৌলভীর গল্প ।


বিদ‘আতী মধ্যে দ্বীনী শিক্ষাও থাকে না, থাকে না দ্বীনও। ভিত্তিহীন অনেক আজগুবী কথা রঙ মাখিয়ে আবিষ্কার করে সেগুলি প্রচার করে সমাজে গুজব ছড়ায়। যাতে অজ্ঞলোকদের মধ্যে সহজে প্রভাব ছড়ানো যায়। উদ্দেশ্য হলো হালুয়া-মিঠাই। রসনার তৃপ্তি ও সহযে মানুষের কাছ থেকে পয়সা বাগিয়ে সম্পদ অর্জনের জন্যেই চলছে এ নষ্টামি ও ভন্ডামী। এরা নিজেদের দ্বীনকে করেছে সম্পদ অর্জনের মাধ্যম আর মানুষকেও করছে পথভ্রষ্ট। এরূপ এক বিদ‘আতীর ঘটনা শোনা গেছে এক গাঁয়ে।

স্বার্থ রক্ষায় গুজব ছড়ানো লোভী মৌলভীর গল্প     

সেখানে একটি মসজিদ ছিল। সেই মসজিদে এক মৌলভী থাকত। এক বৃদ্ধা কবরে সাওয়াব পাঠানোর আশায় মৌলভীর কাছে কিছু খাবার নিয়ে এলো। ঘটনাচক্রে তখন মসজিদে মৌলভী সাহেব ছিল না। এক অগান্তুক মুসাফির সেখানে আগমন করেছিল। বৃদ্ধা মৌলভী সাহেব! মৌলভী সাহেব! বলে  কয়েকবার হাঁক দিল। কোন সাড়া না পেয়ে চিন্তা করল- খাবার খাওয়ানোর উদ্দেশ্য যদি সাওয়াব (পূন্য) অর্জন করা। এই অগান্তুক মুসাফিরকে  খাওয়ালেওতো নেকি হবে। তাই বৃদ্ধা তার আনীত অগান্তুক মুসাফিরকেই দিয়ে দিল। 

মসজিদ হতে বের হলেই দেখলো গেইটে মৌলভী সাহেব এসে গেছেন। বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করল, 'কি কারনে এদিকে এসেছিলেন?
বুড়ি উত্তরে বললো, 'কিছু খাদ্য এনেছিলাম আপনাকে না পেয়ে এ পথিককে দিয়েছি।'

কথাটা শুনতেই মৌলভীর গায়ে যেন রাগের আগুন ধরলো। সে মনে মনে ভাবলো, এতো দেখছি  এক নতুন রাস্তা তৈরি হতে যাচ্ছে। এ মুহুর্তেই এটা বন্ধ করা দরকার। নাহলে আমি অস্তিত্ব সংকটে পড়ব।

 এজন্য সে মসজিদে এসে একটি লাঠি হাতে  নিয়ে মেঝেতে জোরে জোরে আঘাত করে প্রচন্ড শব্দ তৈরি  করল। পুরো মসজিদে পাগলের মত দোড়াদৌড়ি করে লাঠির আঘাতে শব্দ করতে করতে শেষে ধপাস করে পড়ে গেল এবং মেঝেতে হাত-পা ছেড়ে শুয়ে থাকলো।

কৌতুহলি জনতা এ দৃশ্য জ্ঞাত হয়ে মসজিদে এসে জড়ো হলো। সবাই ধরাধরি করে মৌলভী কে তুলে বসাল।
তারপর জিজ্ঞেস করল, 'কি হয়েছে মৌলভী সাহেব, আপনার  কি হয়েছে?'
মৌলভী বলল, ‘এই গ্রামে আমি আর থাকতে পারবোনা।

গ্রামের লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ‘কারণ কি?’

মৌলভী বলল, 'আমি এখানকার সব মৃতব্যক্তির আত্মাকে আমি চিনি। অগান্তুক পথিক সবাইকে চেনে না। তাই খাবার বন্টন করার সময় অন্য গ্রামের মৃত ব্যক্তিদের দিয়েছে, সত্যিকারের যারা প্রাপ্য, তারা কিছুই পায়নি। অগান্তুক পথিক  বুঝতে পারেনি বলে তাকে কিছু বলেনি। কিন্তু যখন আমি আসলাম তখন সকল মৃতআত্মা আমাকে ঘিরে ধরলো। এত ভয় দেখালাম, এত লাঠি মারলাম আর বললাম, যখন আমার হাতে দেয়ইনি তখন তোমাদেরকে আমি দিব কিভাবে? 

কিন্তু আমার একটি কথাও শুনলো না, সবাই মিলে আমাকে চিৎ করে ফেলে দিয়ে বুকের উপর চড়ে বসলো। তোমরা যদি এসে না ধরতে তবে আমার প্রাণ কেড়ে নিত। 

কিন্তু তোমরা এভাবে আমাকে কতদিন রক্ষা করবে। তাই এখান থেকে চলে যাওয়াই ভাল।'

অসহায় গ্রামবাসী একেবারে বেকায়দায় পড়ে গেল।
অতপর সবাই ঐক্যমত হয়ে বললো, 'কোথাও যাবেন না, এখন থেকে আপনার কাছেই সব খাবার দেয়া হবে।'

এসব ভিত্তিহীন কথায় লোকগুলিকে অধীন করে নিজের উদ্দেশ্য অর্জন করেতো নিল, কিন্তু একটুও ভেবে দেখল না যে, এই লোকগুলির এরূপ বিশ্বাসের কারনে হেদায়েত পাবে না- কি পথভ্রষ্ট হয়ে গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। 

এই সকল জাহেল বিদআতী মৌলভীদের কারণেই এরা অনেকের কাছে তুচ্ছ এক প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url