অন্তিম সময়ের দৃঢ়তা | জীবনের গল্প
অন্তিম সময়ের দৃঢ়তা
আবু রাইহান আল বেরূনী দীর্ঘ ৭৮ বছর জীবন পেয়েছিলেন। সারা জীবন তিনি ইলম অন্বেষণ ও কিতাবাদী রচনায় গত করেছেন। প্রতিনিয়ত তিনি জ্ঞানের নতুন নতুন অধ্যায় সুচনা করতেন এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ের চর্চায় লেগে থাকতেন। তাঁর কলম কখনো তাঁর হাত ছাড়া হত না। খাওয়া-দাওয়া ও অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া সারা জীবন তিনি কখনোই লেখাপড়া ও শিক্ষাদান থেকে অবসর গ্রহণ করেননি।
ফকীহ আবুল হাসান আলী ইবনে বলেছেন-
‘আবু রাইহান যখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন আমি তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম।তাঁর ঘরে প্রবেশ করেই বুঝতে পারলাম, তিনি জীবনের শেষ সীমায় পৌছে গেছেন। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছিল। এমন সময় তিনি আমাকে বললেন, আপনি আমাকে নানীর মীরাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন!
আমি তাঁর প্রতি দয়াদ্র হয়ে বললাম, এ মুহূর্তে এ আলোচনা! আপনার এমন অসুস্থতার সময় মাসআলা নিয়ে আলোচনা না করলে হয়না?এ মাসআলা সম্পর্কে অবগত হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়া কি এ সম্বন্ধে অজ্ঞ থাকা অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়া হতে উত্তম নয়?
আমি তখন বিষয়টি পুনরায় বললাম আর তিনি তা আমার নিকট ব্যখ্যা করতে লাগলেন। আমাদের কথাবার্তা শেষ হলে আমি তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।
আমি কেবল তাঁর ঘর থেকে বের হয়েছি, এরই মধ্যে ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।
এ ছিল সেই দৃঢ় হিম্মত, যা কঠিন থেকে কঠিন পরিস্থিতিতেও পথ খুঁজে বের করে নিতে পারে।
হযরত ওমর (রাযি.) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তখন তাঁর জখম রক্ত ঝরছিল, এমন সময়ও তিনি তাঁর সঙ্গিদের জিজ্ঞেস করছিলেন যে, তিনি সালাত সমাপ্ত করেছেন কিনা?
হযরত সা‘দ ইবনে রবী‘ (রাযি.) উহুদের যুদ্ধে রক্তে রঞ্জিত হয়ে জীবনের শেষ মুহুর্ত অতিক্রম করছিলেন। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ব্যপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন।
এ হচ্ছে দৃঢ়তা ও ঈমানের নূরে অন্তর পরিপূর্ণ হওয়ার উপমা।