সৎ মায়ের আদর : আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) রচিত গল্প
সৎ মায়ের আদর : আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) রচিত গল্প
প্রজাদের সুবিধার জন্য সরকার সুদ প্রথা চালু
করেছে। খোলা চোখে দেখলে মনে হয় যে, সরকার জনসাধারণকে খুবই আদর করছে। বিনা পরিশ্রমে
তাদেরকে (সুদ নীতিতে) কখনও পুরস্কার, কখনো লাভ, আবার কখনো বোনাস বা ইন্টারেষ্ট নাম
দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে চলেছে। কিন্তু বিনাশ্রমে এসব সুবিধা
পেয়ে জনগন যে অলস ও অক্ষম হয়ে দিন দিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং আত্মার মৃত্যু
হয়ে দ্বীনী আগ্রহ উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলছে সেদিকে কেউ লক্ষ করছে না। সরকারের মনোভাব হলো
সেই স্ত্রী লোকের মতো যে তার সতীনের ছেলেটিকে খুবই আদর করতো।
অর্থাৎ
সেই স্ত্রী লোকটির দুটি ছেলে ছিল। একটি নিজের ছেলে, অপরটি সতীনের ছেলে। সে সতীনের ছেলেটিকে
সব সময় কোলে বয়ে বেড়াত। উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে কখনো ছেলেটিকে কোল থেকে নামাতো না। এমনকি
কোলে কাঁখে নিয়েই সংসারের কাজ-কর্ম করতো। পাড়ায় বেড়াতে গেলেও সতীনের ছেলেটিকে কোলে নিয়ে
নিজের ছেলেটিকে হাত ধরে পায়ে হাটিয়ে নিয়ে যেত। পাড়ার মেয়রা সব তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
সবাই বলতে লাগলো ‘মেয়েটির মনে হিংসার লেশ মাত্র নেই। সতীনের ছেলেকে কোলে আর নিজের ছেলেকে
হাঁটিয়ে নিয়ে বেড়ায়। সতীনের ছেলেকে এত আদর করতে আর কোথাও দেখা যায়না। এমন সতী-সাধ্বী
নারী আর হয় না।’
কিন্তু
একদিন পাড়ার একটি মেয়েলোক এসে গোপনে সহানুভূতির সাথে বললো ‘বুবু! নিজের ছেলেকে অবহেলা করে সতীনের ছেলেকে
এত আদর করা ঠিক না। তাতে নিজেরই ক্ষতি।’
উত্তরে
মেয়েলোকটি বলল, না বুবু, এটা আমার ছেলের প্রতি অবহেলা নয়। নিজের ছেলেকে হাটিয়ে নিয়ে
বেড়াই যেন তার পা শক্ত হয় এবং স্বাবলম্বী হয়ে সমাজে মজবুত হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর সতীনের
ছেলেকে কোলে নিয়ে বেড়াই যেন সে কোন দিন হাঁটতে না শেখে। কোলে থাকতে থাকতে অচল এবং পঙ্গু
হয়ে কোনদিন সমাজে মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবে না। এটা সতীনের ছেলের প্রতি আদর নয়। কিন্তু
মানুষ বুঝতে না পেরে আমার প্রশংসা করছে তা আমি কি করবো?
ঠিক
সেভাবে জাতী সুদ খেয়ে খেয়ে শ্রম বিমুখ হোক; অলস এবং অকর্মন্য হোক, পঙ্গু হয়ে ধ্বংস প্রাপ্ত হোক । কিন্তু সরকার
অবুঝ লোকদের প্রসংসা পেয়ে ধন্য, গর্বিত এবং আহ্লাদিত।