কুরআনুল কারীম বিষয়ে আমাদের দায়-দায়িত্ব

কুরআনুল কারীম বিষয়ে আমাদের দায়-দায়িত্ব

সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি স্বীয় কিতাব কুরআন মাজীদকে আলহামদুদ্বারা শুরু করেছেন এবং বলছেন:
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
অন্য স্থানে বলেন :
الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ بِرَبِّهِم يَعْدِلُونَ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন আলো ও অন্ধকার; এ সত্ত্বেও যারা কাফির হয়েছে তারা অপর কিছুকে তাদের রবের সমকক্ষ নিরূপণ করেছে। (সূরা আনআম, : ১)
এরূপভাবে তিনি তাঁর সৃষ্টজীবের সমাপ্তিও স্বীয় প্রশংসার মাধ্যমে করেছেন। জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীর পরিণাম সম্পর্কে তিনি বলেন :
وَتَرَى الْمَلَائِكَةَ حَافِّينَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْحَقِّ وَقِيلَ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
এবং তুমি মালাইকা/ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা আরশের চতুস্পার্শ্বে ঘিরে তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। আর তাদের বিচার করা হবে ন্যায়ের সাথে। বলা হবে; প্রশংসা জগতসমূহের রাব্ব আল্লাহর প্রাপ্য। (সূরা যুমার, ৩৯ :৭৫)
এজন্যই আল্লাহ তাআলার ফরমান রয়েছে :
وَهُوَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَهُ الْحَمْدُ فِي الْأُولَى وَالْآخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই; দুনিয়া ও আখিরাতে প্রশংসা তাঁরই, বিধান তাঁরই আয়ত্ত্বাধীন; তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা কাসাস, ২৮ : ৭০)
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি স্বীয় রাসূলদেরকে পাঠিয়েছেন।
এ প্রসংঙ্গে তিনি বলেন :
رُّسُلاً مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلاَّ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا
আমি সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শক রূপে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি যাতে রাসূলগণের পরে লোকদের মধ্যে আল্লাহ সম্বন্ধে কোন অপবাদ দেয়ার অবকাশ না থাকে এবং আল্লাহ পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী। (সূরা নিসা, : ১৬৫)
ঐ সকল রাসূলের ক্রম পরম্পরা এমন নিরক্ষর আরাবী নাবী দ্বারা শেষ করেছেন যিনি সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল পথের সন্ধান দিয়েছেন। তাঁর সময় থেকে শুরু করে কিয়ামাত পর্যন্ত সমস্ত জিন ও মানবের কাছে তিনি নাবী রূপে প্রেরিত হয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে :
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ يُحْيِـي وَيُمِيتُ فَآمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
বল : হে মানবমন্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্য সেই আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি, যিনি আকাশ ও ভূ-মন্ডলের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র মালিক, তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর সেই বার্তাবাহক নিরক্ষর নাবীর প্রতি ঈমান আনয়ন কর। যে আল্লাহ ও তাঁর কালামে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে, তোমরা তারই অনুসরণ কর। আশা করা যায়, তোমরা সরল সঠিক পথের সন্ধান পাবে।
(সূরা আরাফ, : ১৫৮)
আরও এক জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
لأُنذِرَكُم بِهِ وَمَن بَلَغَ
যেন আমি তোমাদেরকে এবং যাদের নিকট এটি পৌঁছবে তাদের সকলকে এর দ্বারা সতর্ক করি। (সূরা আনআম, : ১৯)
সুতরাং আরাব, অনারাব, কালো ও সাদা যে মানুষের নিকট এই কুরআনের উদাত্ত বাণী পৌঁছেছে, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সকলের জন্যই ভয় প্রদর্শক। এই জন্যই
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الأَحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ
অন্যান্য সম্প্রদায়ের যে ব্যক্তি এই কুরআন অমান্য করবে, তাহলে জাহান্নাম হবে
তার প্রতিশ্রত স্থান। (সূরা হুদ, ১১ : ১৭)
অন্যত্র পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হচ্ছে :
فَذَرْنِي وَمَن يُكَذِّبُ بِهَذَا الْحَدِيثِ سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ
যারা আমাকে এবং এই বাণীকে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে ছেড়ে দাও আমার হাতে, আমি তাদেরকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধরব যে, তারা জানতে পারবেনা। (সূরা কলম, ৬৮ : ৪৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
আমার পয়গাম্বরী এত ব্যাপক যে, আমি প্রত্যেক লাল ও কালোর প্রতি নাবীরূপে প্রেরিত হয়েছি। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, ‘অর্থাৎ প্রত্যেক দানব এবং মানবের প্রতি (আহমাদ ৫/১৪৫)
সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত দানব ও মানবের নিকট আল্লাহর বার্তাবাহক, সকলের নিকট তিনি মহিমানি¦ত আল্লাহর বাণী ও মর্যাদাপূর্ণ কুরআন ঠিকভাবেই পৌঁছে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ
কোন মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করবেনা। সম্মুখ হতেও নয়, পশ্চাৎ হতেও নয়; এটা প্রজ্ঞাময় প্রশংসাহ আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা হা-মীম সাজদাহ, ৪১ : ৪২)
সুতরাং আলেম সমাজের প্রধান কর্তব্য হল সবার কাছে আল্লাহর এই পবিত্র বাণীর ভাব ও মর্ম প্রকাশ করে দেয়া, এর সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করা, যথা নিয়মে এর পঠন পাঠন নিজে শিক্ষা করা ও অপরকে শিক্ষা দেয়া। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
وَإِذَ أَخَذَ اللّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلاَ تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاء ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْاْ بِهِ ثَمَناً قَلِيلاً فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ
আর যখন আল্লাহ, যাদেরকে গ্রন্থ প্রদান করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন, তারা নিশ্চয়ই এটি লোকদের মধ্যে ব্যক্ত করবে এবং তা গোপন করবেনা; কিন্তু তারা ওটা তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং ওটা অল্প মূল্যে বিক্রি করল। অতএব তারা যা ক্রয় করেছিল তা নিকৃষ্টতর।  (সূরা আলে ইমরান, : ১৮৭)
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা অন্যত্র বলেন :
إِنَّ الَّذِينَ اشْتَرَوُاْ الْكُفْرَ بِالإِيمَانِ لَن يَضُرُّواْ اللّهَ شَيْئًا وَلهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর প্রতি অঙ্গীকার ও স্বীয় শপথ সামান্য মূল্যে বিক্রি করে, পরকালে তাদের কোনই অংশ নেই এবং উত্থান দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেননা এবং তাদের প্রতি দৃষ্টিপাতও করবেননা এবং পরিশুদ্ধও করবেননা। তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
(সূরা আলে ইমরান, : ৭৭)
সুতরাং আমাদের পূর্বে যেসব উম্মাতকে আসমানী কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং দুনিয়া লাভের কাজে মগ্ন হয়েছিল ও আল্লাহ তাআলার নিষিদ্ধ জিনিসের পিছনে পড়ে মহান আল্লাহর কিতাবকে পরিত্যাগ করেছিল, আল্লাহ তাআলা তাদের জঘন্য কাজের কথা বর্ণনা করেছেন।
সুতরাং আমাদের মুসলিম সমাজের উচিত যে, আমরা যেন এমন কাজ না করি যা নিন্দার কারণ হয়, বরং আল্লাহর নির্দেশাবলীকে মনঃপ্রাণ দিয়ে অবনত মাথায় পালন করা এবং পবিত্র কুরআন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়ার কাজে ব্যস্ত থাকাই হবে আমাদের একমাত্র কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন :
أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ

اعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
যারা ঈমান আনে তাদের হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হওয়ার সময় কি আসেনি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে? এবং পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মত যেন তারা না হয়, বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাদের অধিকাংশই সত্যত্যাগী। জেনে রেখ, আল্লাহই ধরিত্রীকে ওর মৃত্যু র পর পুনর্জীবিত করেন। আমি নিদর্শনগুলি তোমাদের জন্য বিশদভাবে ব্যক্ত করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।
(সূরা হাদীদ, ৫৭ : ১৬-১৭)
এই দুই আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, কি সুন্দরভাবে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, এভাবে বৃষ্টির সাহায্যে শুষ্ক ভূমি সতেজ হয়ে উঠে, ঠিক তেমনিভাবে যে অন্তর অবাধ্যতা ও পাপের কারণে শক্ত হয়ে গেছে, ঈমান ও হিদায়াতের ফলে তা নরম ও দ্রবীভূত হয়ে থাকে। পরম দাতা ও দয়ালু বিশ্বপ্রভুর কবূলের প্রতি আশা-ভরসা রেখে আমরাও আকুল প্রার্থনা জানাচ্ছি যে, তিনি যেন আমাদের অন্তরকেও নরম করে দেন। আমীন!

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url