অমুসলিমদের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব কাদের?

অমুসলিমদের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব কাদের?

মাও. যুবায়ের আহমদ

অমুসলিমদের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব প্রতিটি মুসলমানের। আমরা অনেকে মনে করি এই দায়িত্ব শুধু ওলামায়ে কেরামের।
না ভাই! বরং এই দায়িত্ব সকল মুসলিম সাধারণের
আল্লাহ তাআলা বলেন:
তোমরা উত্তম জাতি, তোমাদেরকে বের করা হয়েছে মানুষের জন্যআলে ইমরান:১১০
কিন্তু এখানে বলেননি যে, হে ওলামায়ে কেরাম! তোমরা উত্তম জাতি। বরং এখানে সকল মুসলমানদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে।
রাসুল (সা.)ইরশাদ করেন:“আমার কাছ থেকে একটি বাক্য হলেও মানুষের কাছে  পৌঁছে দাও।
এখানে বলা হয়নি, হে ওলামায়ে কেরাম তোমরা পৌঁছে দাও।
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় এই দায়িত্ব সকল মুসলমানের উপর অর্পিত হয়েছে।
   অতএব, বুঝা গেল আপনি ইঞ্জিনিয়ার হোন, আর ডাক্তার হোন, কৃষক হোন আর দিন-মজুর হোন, যেই হোন না কেন, আপনাকে নিজের আত্মশুদ্ধির চিন্তা করতে হবে এবং অমুসলিমদেরকে দাওয়াত দিতে হবে।
আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন
অমুসলিমদের দাওয়াত দেয়া মানবতার দাবি
মানব থেকে মানবতা, প্রতিটি মানুষের প্রতি অপর মানুষের জন্য মানবতার দাবি হলো, সে অন্য মানুষের উপকার করবে। আর কেউ যদি কোনো বিপদে পড়ে তাহলে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে।
আমরা মুসলমানগণ জানি, প্রতিটি অমুসলিম মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
অর্থ: আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ী ভাবে থাকবে। তারা সৃষ্টির অধম। -সূরা-বাইয়্যিনাহ:৬
প্রিয় পাঠক! আপনার প্রতিবেশী হিন্দু বা খ্রিস্টানদের বাড়িতে যদি আগুন লেগে যায়, তাহলে আপনি কি বসে থাকবেন? না আগুন নিভাতে যাবেন? অবশ্যই আগুন নিভাতে যাবেন। আল্লাহ না করুন, যদি কোনো
মুসলিম মহল্লায় আগুন লেগে যায়, তাহলে প্রতিবেশী অমুসলিম ভাইয়েরা কি বসে থাকবেন?
না আগুন নিভাতে যাবে না? অবশ্যই আগুন নিভাতে আসবে। দেখুন! আমরা দুনিয়াতে ক্ষণস্থায়ী আগুন থেকে উদ্ধার করারজন্য কত সুন্দর মানবতার পরিচয় দিয়ে থাকি।
কিন্তু একটুকি চিন্তা করেছি যে, দুনিয়ার আগুনে জ্বলে যদি কারো ত্বক নষ্ট হয়ে যায়, বা ঘরবাড়ি পুড়ে ছারখার হয়ে যায়, তাহলে ঔষধ দ্বারা পুনরায় ত্বক ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে উত্তম বাড়ি বানানো সম্ভব। কিন্তু যে ভাইটি ইসলাম গ্রহণ না করে, চিরস্থায়ী আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে, যার থেকে ফিরানো বা বাঁচানোর কোনো পথ নেই, সেই চিরস্থায়ী আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য কি কখনো ভেবেছি?
প্রিয় পাঠক! আমাদের অনেক অমুসলিম বন্ধু আছেন, যাদের সাথে একত্রে চলা-ফেরা করি। একই অফিসে চাকরি করি। তার দোকান থেকে কেনা-কাটা করি। তার বিপদে-আপদে সহযোগিতার হাত বাড়াই।
একথাও জানি এই ভাইটি মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী আগুনে জ্বলবে।
প্রিয় পাঠক!আমাদের কেমন মানবতা? আমার সামনে আমার এক ভাই বা বোন জাহান্নামের চিরস্থায়ী আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে, কিন্তু কোনো দিন এই ভাইটিকে বলিনি যে, ভাই! তুমি যে রাস্তায় চলছো এটা জাহান্নামের পথ।
কোনো দিন তাকে জান্নাতের পথ ইসলাম দেখাইনি। কেমন জানি তাকে আগুনে জ্বলতে দেখেও আমি চুপ হয়ে আছি। এটা আমাদের কেমন মানবতা?
আর কতো দিন এভাবে দেখব? বলুন! এভাবে আর কতোদিন বসে বসে তাদেরকে আগুনে ঝাঁপ দিতে দেখব? চলুন, আর সময় নেই, আমার কাছে যদি সত্যিকার মানবতা থাকে, তাহলে আমার প্রতিবেশী অমুসলিমকে আগুনে জ্বলতে দিব না।
আমাদের দায়িত্ব হলো তাকে জান্নাতের পথ দেখিয়ে দেয়া। মানা না মানা তার ব্যাপার। দাওয়াত পাওয়া তাদের অধিকার, গ্রহণ করা-না করা তাদের এখতিয়ার।
আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে তাদের আমানত ইসলামতাদের পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়ে
ওদেরকে চিরস্থায়ী আগুন থেকে বাঁচানোর মাধ্যম বানিয়ে নিন এবং আমাদের উপর তিনি খুশি হয়ে যান। আমীন।

একজন হেদায়েত প্রাপ্ত হলেও তা তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট
এক বর্ণনায় এসেছে যে, যখন কোনো দায়ী  কোনো ভ্রান্ত পথের পথিককে যে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর উপাসনায় লিপ্ত থাকে এমন ব্যক্তিকে ভ্রান্ত উপাসনা থেকে উদ্ধার করে, আল্লাহ্র পথে নিয়ে আসে এবং কোনো মানুষের হেদায়েত প্রাপ্তির মাধ্যম হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তাআলা দায়ী বান্দার প্রতি এমনই খুশি হন, যেমনটি খুশি হন সেই মুসাফির যে তার উটের পিঠে মাল-সামান নিয়ে বিরান মরুভূমিতে সফর করছিল, পথিমধ্যে সে একটি বৃক্ষের সাথে উটটি বেঁধে আরাম করছিল। জেগে দেখে উট উধাও। সে উটের খোঁজে বের হলো, কিন্তু কোথাও উটটি না পেয়ে নিরাশ হয়ে গেল। আর এ বিরান প্রান্তরে নিজের এহেন অবস্থার দরুন বুঝল যে, আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম। এমতাবস্থায় হঠাৎ উটটি মালামালসহ পাওয়া গেলে সে এতই আনন্দিত হয় যে, খুশির জোয়ারে ভেসে লোকটি কী বলতে কী বলে সে খেয়ালটাও তার ছিল না। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে ফেলে-    হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আর আমি তোমার খোদা-(?)  অর্থাৎ আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল।
বস্তুত এটা মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি অনুসারে উদাহরণ দেয়া হয়েছে, যাতে অত্যন্ত আনন্দিত হওয়া বোঝা যায়; অন্যথায় আল্লাহ তাআলার খুশি এ উদাহরণের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত হতে পারে?
প্রিয় পাঠক! প্রকৃত জিনিস যার জন্য সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.) আগমন করেছেন, ধর্মের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। মানুষের বরং দুনিয়ার সকল জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি যেটাকে উদ্দেশ্য হিসেবে মনে করে ও কামনা করে, তা হলো নাজাত বা পরিত্রাণ।
এখানে এক ব্যক্তির হেদায়েত প্রাপ্তিতে নাজাতের ওয়াদা করা হয়েছে। তাহলে কোন্ জিনিস আমাদেরকে এমন পবিত্র দাওয়াতী কাজ থেকে বিরত রাখছে?
ওই মেহেরবান আল্লাহ্ সাথে যদি আমাদের ভালবাসার সম্পর্কের বাঁধন জোরদার করতে হয় তাহলে  এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই
 প্রিয়নবী (সা.) এর ব্যপারে কুরআনুল কারীমের আয়াত :
তারা ঈমান আনছে না এই দুঃখে হয়ত তুমি নিজের জীবন শেষ
করে দিবে?তিনি কতটা দাওয়াতী চরিত্রের অধিকারী ছিলেন
দাওয়াতকে নিজ জীবনের উদ্দেশ্য পরিণত করুন। আর যে সব একনিষ্ঠ ব্যক্তিদের এর প্রতি আকৃষ্ট করা সম্ভব হয় তাকে সৌভাগ্য মনে করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url