সমসাময়িক রাজা-বাদশাহ, সম্রাট ও গোত্র প্রধান দের কাছে লিখিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিঠি

সমসাময়িক রাজা-বাদশাহ, সম্রাট ও গোত্র প্রধান দের কাছে লিখিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিঠি

হুদায়বিয়ার সন্ধি থেকে রাসূলুল্লাহর ইন্তেকাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন গোত্রের গোত্রপতি, আঞ্চলিক শাসকবর্গ, প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমূহের রাষ্ট্রপ্রধান এবং ধর্মীয় নেতাদের নামে লিখিত রাসুল এর চিঠির সংখ্যা প্রায় আড়াইশ’ বলে ধারণা করা হয়।  এর মধ্যে আবিসিনিয়ার অধিপতি নাজ্জাশী, রোম অধিপতি হিরাক্লিয়াস, ইরান অধিপতি খসরু পারভেজ এবং মিশরের গভর্নর মুকাওকাসের নিকট প্রেরিত চিঠি গুলোর কথা ইতিহাসে সাধারণভাবে আলোচিত হয়ে আসছে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু সালামের পত্রগুলোর আসল কপি সমূহ উদ্ধার এবং এগুলোর পার্থক্যের বিচার বিশ্লেষণে খ্যাতনামা পণ্ডিত ডঃ হামিদুল্লাহ (প্যারিস) অত্যন্ত কষ্ট করেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আসল চিঠিগুলো এবং ঐগুলোর অনুলিপিগুলোর মধ্যে পার্থক্যের কিছু কিছু উদাহরণও দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ বাহরাইন শাসক মুনযির ইবনে সাওয়ার নামে প্রেরিত রাসূল (সা.)-এর চিঠির প্রথম লাইনের পাঠোদ্ধার করা হয়েছে ‘লা ইলাহা গায়রুহু’ বলে। অথচ ঐতিহাসিকগণ সাধারণভাবে একে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে বর্ণনা করে আসছেন।পাঠ ও মর্মের এই ব্যবধান খুব বেশি না হলেও এ কথা বলতেই হবে যে, কালের বিবর্তনে এবং সুদীর্ঘ যুগ পরিক্রমার দরুন আসল চিঠিগুলোর নকল সমূহের এই পাঠগত ও অর্থ তারতম্য সূচিত হয়েছে। রাসূল (সা.) চিঠিসমূহে তাঁর পবিত্র নাম সম্বলিত যে মোহর অংকিত তা সকল চিঠিতেই এক রকম।  আর তাঁর আলোকচিত্র হলোঃ  সর্বশীর্ষে ‘আল্লাহ’ মধ্যে ‘রাসূল’ এবং সর্বনিম্নে পবিত্র নাম ‘মুহাম্মদ’ (সা.)।

সম্বোধনে রাসূল (সা.) এর নামে নাম আগে এবং চিঠি প্রাপকের নাম পরে থাকতো। ঐ যুগে বিশেষত রাজ-রাজারা ও আমীর ওমরাদের কাছে চিঠি লেখার সময় প্রাপকের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে তার নাম আগে এবং প্রেরকের নাম পরে লিখারই রেওয়াজ ছিল।  কিন্তু রাসূল (সা.)-এর  চিঠিগুলো ছিল এর ব্যতিক্রম। তিনি প্রাপকের নাম তো পরে দিতেনই তারপরও প্রাপকের নামের সাথে তেমন কোনো আড়ম্বরপূর্ণ পদবীও ব্যবহার করতেন না।  একান্তই আড়ম্বরহীন ভাবে তার নাম লিখে দিতেন।
রাসূল (সা.) এ ধরনের সম্বোধনে রাজা বাদশাহদের দরবারে দারুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। কেননা তখনকার দিনে এ কথা কল্পনাই করা যায় না, প্রবল প্রতাপান্বিত রোম পারস্যের সম্রাট কেও কেউ এমন নির্ভীকভাবে সম্মোধন করতে পারে!

এর ফলে রাজ দরবারের আমীর-ওমরা, গোত্রপতি, অন্যান্য রাজন্যবর্গ ভাবতে শুরু করলো নিশ্চয় এর পেছনে কোন বিরাট শক্তি কাজ করছে।  তা না হলে কেউ কখনো এমন সাধারণভাবে প্রবল প্রতাপান্বিত সম্রাট কে সম্বোধন করতে পারে না । এরূপ সম্বোধনের ফলে ইসলামের একটা মনস্তাত্ত্বিক বিজয় অর্জিত হয়েছে ।

ইরান সম্রাট খসরু পারভেজ তো চিঠির শীর্ষে  ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এর পক্ষ থেকে ইরান সম্রাট কিসরার নামে’ দেখেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠেন । এ সম্বোধনকে ইরান সম্রাটের কাছে এতটাই অপমানজনক ও অসহনীয় মনে হয়েছিল যে, তিনি তৎক্ষণাৎ রাসুল (সা.) এর চিঠি ছিড়ে ফেলে দেন।
রাসুল (সা.) এর চিঠিগুলোর সাধারণভাবে মূল কথা ছিল,
‘আমি আল্লাহর বার্তাবাহক রাসুল। আমার রিসালাত কে মেনে নাও! যে হেদায়েত আল্লাহ আমার মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন তা গ্রহণ করো।’

রাসূল (সা.)-এর চিঠিতে বিসমিল্লাহ লেখার প্রচলন

রাসূলুল্লাহ (সা.) চিঠিপত্রের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লিখতেন।
কিন্তু এরূপ লেখার প্রচলন একবারে হয়নি বরং ক্রমে ক্রমে হয়েছে।  শাবী বলেন রাসূল (সা.) কুরাইশদের মতো প্রথমে ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’ লিখতেন । যখন তার উপর নাযিল হলো‘ বিসমিল্লাহি মাজরেহা’ তখন তিনি লিখলেন বিসমিল্লাহি । অতঃপর যখন নাজিল হলো ‘কুলিদউল্লাহা আবিদুর রহমান’ তখন তিনি লিখলেন ‘বিসমিল্লাহির রাহমান’ । অতঃপর যখন নাজিল হলো ‘ইন্নাহু মিন সুলাইমানা ওয়া ইন্নাহু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ তখন তিনি লিখতে শুরু করলেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ।

উৎস- মুহাম্মদ (সা.) এর চুক্তি ভাষণ। এমদাদুল হক চৌধুরী
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url