শানে নুযুল ও শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী (র.)

শানে নুযুল ও শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী (.)
     হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী (.) তার আল ফাউযুল কাবীরগ্রন্থে শানে নুযূলপ্রসঙ্গে যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন, অনেকেই এর মর্ম উদ্ধার করতে সক্ষম হননি তাই তারা বলে ফেলেছেন হযরত দেহলবী (.)-এর কাছে কুরআন ব্যাখ্যায় শানে নুযুল এর কোনো গুরুত্ব নেই
   প্রকৃতপক্ষে শাহ সাহেবের কথার গভীরে তারা যেতে পারেননি বাস্তবিক পক্ষে তিনি বিখ্যাত তাফসীর কারকদের মত শানে নুযূলকে কোরআনের তাফসীরের অনস্বীর্কায অঙ্গ মনে করতেন  
এ ব্যাপারে তিনি যা লিখেছেন তা নিম্নে তুলে ধরা হলো:

   
মুহাদ্দিসবৃন্দ কুরআনের আয়াতের আলোচনা প্রসঙ্গে এরূপ অনেক কিছুর ব্যাপারে বর্ণনা করে থাকেন যা প্রকৃতপক্ষে শানে নুযুল এর আওতাভুক্ত নয়
যেমন সাহাবীদের পারস্পরিক যুক্তিতর্কের সময় কোন আয়াতকে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা অথবা মহানবী (সা.)-এর নিজের কোন কথার পক্ষে দলীল দেয়ার জন্য কোন আয়াত তেলাওয়াত করা অথবা কোন আয়াতের মৌল উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে সঙ্গতিপূর্ণ কোন হাদীস বর্ণনা করা অথবা নাযিল হওয়ার স্থান নির্ণয় করা অথবা কুরআনের ইঙ্গিতের সাথে উল্লেখিত নাম সমূহ নির্দিষ্ট করা অথবা কোরআনের কোন শব্দ উচ্চারণে অথবা কোরআনের কোন সূরা বা আয়াত এর ফজিলত অথবা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কোরআনের কোন বিধান পালনের পদ্ধতি এগুলোর কোনোটি প্রকৃতপক্ষে শানে নুযূল এর অন্তর্ভুক্ত নয়

সারকথা, তাফসীরের কিতাব সমূহে এক একটি আয়াত এর অধীনে অনেক সময় দশ-বারোটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয় এ রেওয়ায়েতসমূহের সবই শানে নুযূলের সাথে সম্পৃক্ত নয়বরং এতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় :
() কখনো কোন ইলমি পর্যালোচনায় কোন সাহাবী উক্ত আয়াতটি দলিল হিসেবে উল্লেখ করেছেন মুফাসসিরগণ ঘটনাটি উক্ত আয়াতের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে উল্লেখ করেন
 () কখনো মহানবী (সা.) কোন ক্ষেত্রে উক্ত আয়াত দ্বারা দলিল পেশ করেছিলেন মুফাসসিরগণ তাও উক্ত আয়াতের অধীনে উদ্ধৃত করেন
()  কোন আয়াতে যে বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, কখনো একই বিষয় কোন হাদীসে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন তাফসীরের কিতাব সমূহে উক্ত হাদীসে উল্লেখ করা হয়
() কখনো কখনো মুফাসসিরগণ কোন রেওয়ায়েত উদ্বৃত করেন শুধুমাত্র আয়াত নাযিল হওয়ার স্থান নির্দেশ করার জন্যএ রেওয়ায়েতও তাফসীর এর অধীনে সামিল হয়ে যায়
( ) অনেক সময় কোরআন মাজিদে কতিপয় ব্যক্তির উল্লেখ করা হয় ইঙ্গিতপূর্ণভাবে, তাদের নাম উল্লেখ করা হয় না  মুফাসসিরগণ রেওয়ায়েতের মাধ্যমে তাদের নাম নির্দিষ্ট করেন
() অনেক সময় কোন রেওয়ায়েত দ্বারা কুরআন মাজীদের কোন শব্দের সঠিক উচ্চারণ জানা যায় মুফসিসিরগণ এ ধরনের রেওয়ায়েতসমূহও সংশ্লিষ্ট স্থানে উদ্বৃত করেন
() অনেক হাদীসে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন সূরা ও আয়াতের ফজিলত বর্ণিত হয় মুফাসসিরগণ উক্ত আয়াতসমূহও সংশ্লিষ্ট স্থানে উদ্বৃত করেন
() কোথাও কোথাও এমন হাদিসসমূহও তাফসীরের অধীনে উদ্ধৃত করা হয় যা থেকে জানা যায় কোরআন মাজিদের এ হুকুম মহানবী সাল্লাল্লাহু কিভাবে পালন করেছেন  
    হযরত শাহ সাহেব বলেন, এ ধরনের রেওয়ায়েত সমূহ শানে নুযূল এর আওতায় পড়ে না মুফাসসিরদের জন্য এ ধরনের সকল রেওয়ায়েত পুরোপুরি জানাও জরুরি নয়
   

 অবশ্যই শানে নুযুল সম্বলিত যে সকল রেওয়ায়েত বাস্তবিকই মুফাসসিরদের জন্য জানা জরুরী এবং যা ছাড়া এলমে তাফসীরে বিচরণ জায়েজ নয় সে সম্পর্কে হযরত শাহ সাহেব লিখেছেনঃ

   
অবশ্য মুফাসসিরদের জন্য দুটি বিষয় না জানা অপরিহার্য শর্ত  প্রথমত যেসব ঘটনা আয়াতের আয়াতে যে দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, সেসব ঘটনা না জানা পর্যন্ত ঐসব আয়াত সমুহের তাফসীর করার জন্য সেসব ঘটনা জানা অপরির্হায  দ্বিতীয়ত কোন ঘটনা ইত্যাদিতে অনেক সময় সাধারণ শব্দ ব্যবহার করা হয় কিন্তু শানে নুযুল দ্বারা তাতে বিশেষত্ব সৃষ্টি হয় অথবা আয়াতের বাহ্যিক অর্থ একটি আর শানে নুযূল থেকে অন্য অর্থ নিশ্চিত হয়  এ ধরনের রেওয়ায়েত সমূহের জ্ঞান অর্জন ব্যতীত কুরআন মাজীদের আয়াত সমূহের অর্থ অনুধাবন করা যায় না

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url