শিশু ছেলে-মেয়েদের সুন্দর ইসলমী নাম | শিশু ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর করনীয় | নাম রাখার বিধান | ব্যাক্তি জীবনে নামের প্রভাব

শিশু ভুমিষ্ঠ হবার পর করনীয় :

পবিত্র-পরিচ্ছন করা


সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুকে সর্ব প্রথম পাক-সাফ করে নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে অনেকেই ভুল করেন এবং সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুকে ঠান্ডা লগিয়ে অসুস্থ করে ফেলেন। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

উভয় কানে আযান-ইক্বামাত দেয়া 

পবিত্র-পরিচ্ছন করার পর ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দিতে হবে। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে সাহাবী হাসান (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার কোন সন্তান জন্ম গ্রহণ করল । অতপর সে ঐ শিশুর ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইক্বামাত দিল, তাকে “উম্মুস সিবয়্যান” (শয়তান) কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [বাইহাকী-৯ম খন্ড, ৩০৫ পৃ.]

শিশুদের তাহনীক করা 

নবজাত শিশুকে পরিষ্কার করে আজান-ইক্বামাত দেয়ার পর করণীয় সম্পর্কে ‘আয়েশা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নবজাত শিশুদের আনা হত । তিনি তাদের কল্যানের জন্য দু’য়া করতেন এবং তাদের তাহনীক করতেন। [মিশকাত- ৩৯৭১]
তাহনীক হল কোন পরহেযগার ও মুত্তাক্বী লোকের দ্বারা খেজুর চিবিয়ে শিশুর মুখের তালুতে দিয়ে দু‘আ করা। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, খেজুর না পেলে মৌমাছির মধু দ্বার তাহনীক করা উত্তম। তা না পেলে আগুন স্পর্শ করেনা এমন জিনিস উত্তম।
তাহনীক সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলেন, সদ্যপ্রসূত শিশুকে মিষ্টি জাতীয় খবার খাওয়ালে তার পাকযন্ত্রে রাসায়নিক প্রক্রিয়া ভাল হয়।

কখন শিশুর নাম রাখতে হবে: 

আবু মুসা আশ‘আরী (রাযিঃ) বলেন, আমার একটি সন্তান জন্ম হলো। আমি তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমাতে হাজির হলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইব্রাহীম। [বুখারী, ৫ম খন্ড, হা.৫০৬২]  শিশু জন্মের পরই নাম রাখা যাবে। সাতদিন অপেক্ষা করতে হবেনা। যদিও আক্বীক্বাহ সপ্তম দিনে হয় এবং আক্বীক্বার পশু যবেহে নাম নিতে হয় তবুও আগে নাম রাখতে বাধা নেই। ইমাম বাইহাকী বলেন, জন্মের পরই শিশুর নাম রাখা সংক্রান্ত হাদীসগুলো তার সপ্তম দিনে নাম রাখা হাদীস সমুহ থেকে অধিক সঠিক।

ভাল নাম রাখতে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ

আবু দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন নিশ্চয় তোমাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের নাম এবং তোমাদের পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। অতএব তোমরা নিজেদের উত্তম নাম রাখবে। [আবু দাউদ, মিসকাত, ৯ম খন্ড, ৪৫৬১] 

ইবনু উমার (রাযিঃ) এর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় তোমাদের নাম ‘আবদুল্লাহ্’ ও ‘আবদুর রহমান’ [মুসলিম, মিশকাত, ৯ম খন্ড, হা. ৪৫৭৩]


আক্বীকাহ প্রসঙ্গ


আক্বীক্বাহ অর্থ : শিশু জন্মের পর সপ্তম দিবসে নামকরণ ও মাথার চুল কাটা উপলক্ষে পশু কুরবানীর নাম আক্বীক্বাহ। 

আক্বীকার গুরুত্ব :প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক হাদীসে আক্বীকার গুরুত্ব আলোচিত হয়েছে। এখানে দুটি বর্ণনা সামনে আনছি, সালমান ইবনু আমির দাব্বী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন। রাসুল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; প্রত্তেক শিশুর পক্ষ থেকে আক্বীক্বাহ করা প্রয়োজন। অতএব তোমরা  তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (পশু যবেহ কর)। এবং তার থেকে ময়লা বা কষ্টদায়ক বস্তু (যেমন চুল) দূর কর। [তিরমিযী, হা. ১৪৫৭]
আক্বীকাহ কার জন্য কয়টি : আয়েশা (রাযি.) বলেন , আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম ছেলের পক্ষ থেকে দুটি এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী আক্বীকাহ্ দেয়ার হুকুম দিয়েছেন। [তিরমিযী ৩য় খন্ড, হা. ১৪৫৫]

আক্বীকাহ কখন হবে : সামুরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; প্রত্তেক শিশু তার আক্বীকার সাথে দায়বদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে যবাহ করতে হবে, তার নাম রাখতে হবে এবং মাথা কামাতে হবে। [তিরমিযি-হা.১৪৬৪] আয়েশাহ (রাযি.) বলেন, আক্বীকাহ হবে সপ্তম দিনে, তা যদি নাহয় তাহলে চৌদ্দ দিনে। তাও যদি না হয় তাহলে একুশ দিনে। (মুসতাদরাকে হাকিম-৪র্থ খন্ড, পৃ.২৩৯)
আক্বীকার পশু যবেহ্ করার সময় একটি দোয়া রয়েছে। বিখ্যাত তাবেয়ী কাতাদাহ (রহ.) জিজ্ঞেস করা হল যে, আক্বীকাহ্ যবাহ্ করা হবে কিভাবে?  তিনি বললেন, ক্বিবলার দিকে পশুটির মুখ করবে। তারপর গলায়  ছুরি রাখবে। অতঃপর বলবে;

(আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা আক্বীকাতু ফুলানি বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার) ফুলান এর স্থানে যার নামে আক্বীক্বাহ করা হচ্ছে তার নাম বলতে হবে। 
আক্বীকার গোশতের হুকুম কুরবানীর গোসতের হুকুমের মতোই।

নামের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

পরিচয়ের জন্য নামের উৎপত্তি। আল্লাহ তা’আলা আদম (আ.) কে সৃষ্টি করে প্রত্যেক জিনিসের নাম শিখিয়েছিলেন। মানুষের নামের সাথে থাকে তার জাতির পরিচয়। শুধু চিহ্নিত করাই নামকরণের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। এটা ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার পর ছেলে বা মেয়ে সকলেরই একটি অর্থবোধক নাম সাত দিনের মধ্যে রাখা পিতা-মাতার কর্তব্য। আল্লাহর বান্দা বা দাসত্বমূলক নাম, নবীদের নাম, ও সাহাবীদের নামে নাম রাখা উত্তম। আর কোন কাফির, মুশরিক, ফাসিক্ব কিংবা পাপী ব্যক্তিদের নাম রাখা শারীয়াতে নিষিদ্ধ। কারণ, নামের প্রতিক্রিয়া সন্তানের চরিত্রে প্রতিফলিত হয়। হাদীসে এর অসংখ্য প্রমান রয়েছে। 

নবজাত শিশুর অর্থপূর্ণ নাম রাখা জরুরী কেন:

নাম রাখা প্রসঙ্গে হযরত আবু দারদা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; নিশ্চিই তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন তোমাদের নাম এবং তোমাদের পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। অতএব তোমরা তোমাদের নামগুলো সুন্দর সুন্দর রাখ। [আহমদ, আবুদাউদ, মিসকাত ৯ম খন্ড, হা. ৪৭৫৬১] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন যে যে জাতির অনুসরণ করবে, তার সাথে তার হাসর হবে। [আবু দাউদ]
বর্তমানে আমাদের সমাজে অনর্থ ও বিজাতীয় ধরনে নাম রাখা হয়। এ কারনে সন্তানদের উপরও এর প্রভাব দৃশ্যমান। আবার অনেকে সন্তানদের দুটি নাম রাখছেন, একটি সঠিক ও অপরটি অনর্থ ডাক নাম। যে নামটিই বেশি ডাকা হয় ও সঠিক নাটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যবহৃত হয়। এটাও সঠিক নয়। নাম একটি হোক অথবা দুটি, উভয়ই সুন্দর অর্থ বাচক ইসলামী নাম হওয়া চাই।
কোন ধরনের নাম রাখতে হবে: আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; তোমাদের নাম সমুহের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো ‘আবদুল্লাহ্ ও আবদুর রহমান’ [মুসলিম, মিশকাত ৯ম খন্ড] আল্লামা তাবারানী বলেছেন, যে সমস্ত নামে আল্লাহর দাসত্ববোধক অর্থ প্রকাশ পায়, সেসব নামই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। [মিশকাত, ৯ম খন্ড] আবু ওয়াহহাব জুশামী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; তোমরা নবীদের নামানুসারে নাম রাখবে। আর আল্লাহর নিকট আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান নামই সবচেয়ে প্রিয়। [মিশকাত, ৯ম খন্ড-৪৫ পৃ.]।
বিশ্বের সকল মুসলিম এক জাতির, এ সংহতি জোরদার করার জন্য ইসলামী নামের প্রচলন। আর ইসলামী নামের জন্য শর্ত হল আরবী। কেননা আরবী হল আল্লাহর ভাষা, জান্নাতের ভাষা, নাবী (সা.) এর ভাষা, কুরআনের ভাষা ও দুনিয়ার সর্ব প্রথম  ভাষা। তবে আরবী ভাষায় সব নামই ইসলামী নাম নয়, যেমন রাসুল (সা.) অনেক সাহাবীর নাম পরিবর্তন করেছেন। তাই ৈঐ ধরণের নামগুলো গ্রহণীয় নয়। আল্লাহর পছন্দনীয় রাসুল (সা.) কতৃক  নির্দেশিত েএবং সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ী, তাবিতাবিঈ, ও তারপর সালফে সালিহীনদের নামেই প্রকৃত ইসলামী নাম।

যে ধরণের নাম রাখা নিষিদ্ধ:

আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিষিদ্ধ নাম -মালিকুল মুলক (রাজার রাজা) । [বুখারী, ৫ম খন্ড-হা.৫৭৬৪-৬৫]
কোরআনের কোন সূরার নামে নাম রাখা, যেমন; ইয়াসিন, ত্বহা ইত্যাদি। [তুহফাতুল মাওদুদ-80পৃ.] 
শুধুমাত্র আল্লাহর নামে নাম রাখা নিষিদ্ধ- যেমন; রাহীম, রহমান, জাব্বার ইত্যাদি। তবে আল্লাহ নামের সাথে আবদ বা বান্দা যোগ করে নাম রাখা খুবই উত্তম। যেমন; আবদুল্লাহ, আবদুর রহীম ইত্যাদি।
জবির ও সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন; তোমরা রাফি, ইয়াসার, বারাকাত, রাবাহ, আলফাহ, ও নাজীহ নাম রেখো না। [তিরমিযী ৫ম খন্ড, হা. ২৭৭২-৭৩]
কিছু মাকরূহ বা ঘৃণ্য নাম; ইসলামের চরম শত্রু ফিরাউন, কারুন, হামান, ওয়ালীদ ইত্যাদি। [ইসলামে নামকরণের পদ্ধতি-৭৫ পৃ.]
কিছু বিশ্লেষণমূলক নাম যথা খাইরুল আনাম (সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি) খলীলুল্লাহ (আল্লাহর বন্ধু) আবুল বাসার (মানবজাতির পিতা) , সাইয়্যেদুল বাসার ইত্যাদি নাম রাখাও ঠিক নয়, কারণ এসব বিভিন্ন  নবীদের উপাধী যা আমাদের ধারণ করা উচিত নয়।এছাড়াও ফেরেশতাদের নাম, যথা জিব্রাইল, মিকাইল ইত্যাদি নামও আপত্তিকর।আলেমদের মতে আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্ট বস্তুর নামের পূর্বে আবদ বা বান্দা যোগ করে নাম রাখা হারাম। যেমন; আবদুন নবী, গোলাম হোসেন, গোলাম আলি ইত্যাদি।
কিছু অর্থহীন নাম যা প্রচলিত : জরিনা, রুবিনা, হেলেনা, সেলিনা, রুকসানা, শাহীনা রেশমা, ফরহাদ ইত্যাদি।কিছু আপত্তিকর বিজাতীয় নামসমুহ: সান্টু, জন্টু, মিন্টু, বান্টু, নান্টু, রিন্টু ঝল্টু, বল্টু, হ্যপি, বাপ্পি, তপু, অপু, সুমন, লিটন, স্বপন, কালা, ভোলা ইত্যাদি সহ অনেক নাম রয়েছে যা একসাথে বিজাতীয় এবং মুসলিমরাও রাখছে। ত্রুটি যুক্ত ব্যঙ্গ ও বিকৃত নাম পরিহার ও পরিবর্তণ প্রয়োজন: অর্থহীন, বিজাতীয়, আপত্তিকর, ব্যঙ্গ ও বিকৃত করে নাম ডাকা ইসলাম সমর্থ ন করে না।আল্লাহ তায়ালা বলেন; “তোরা একে অপরের মন্দ  নামে ডেকোনা। [সুরা হুজুরাত-১১]
আয়িসাহ্ (রাযি.) নাবী (সা.) খারাপ নাম পরিবর্তন করে দিতেন। [মিসকাত ৯ম খন্ড-হা.৪৫৬৭]
নাবী (সা.) এর সম্মুখে কেউ এলেই প্রথমে  তার নাম জিজ্ঞেস করতেন এবং তা পছন্দ হলে খুশি হতেন কিন্তু অপছন্দ হলে তার মুখমন্ডলে বিরক্তি ভাব প্রকাশ পেত। কোন ব্যাক্তির নাম অপছন্দ হলে সঙ্গে সঙ্গে নাম পরিবর্তন করে দিতেন। যেমন -আলী (রাযি.) বলেন; যখন হাসানের জন্ম হয়, তখন তার নাম রাখলাম হারব (যুদ্ধ)। তিনি বলেন তারপর নাবী (সা.) এসে বললেন: ছেলেকে আমায় দেখাও, তার কি নাম রেখেছ? আমরা বললাম হারব (যুদ্ধ)। তিনি বললেন; বরং সে হাসান (সুন্দর)। যখন হুসাইনের জন্ম হল তখন তার নাম রাখলাম হারব । হুসাইন (সুন্দর)। যখন তৃতীয়টি জন্মগ্রহণ তারও নাম রাখলাম হারব। তারপর নাবী (সা.) বললেন: ছেলেকে আমায় দেখাও, তার কি নাম রেখেছ? আমরা বললাম হারব (যুদ্ধ)। তিনি বললেন; বরং সে মুহসিন। [ আহমাদ ১ম খন্ড, আদাবুল মুফরাদ-হা.২৭৭৫]
তাই প্রত্যেক অভিভাবকদের উচিত, শখ করে কেই নাম রাখলে বা ডাকলেও অবশ্যই অর্থহীন বা কুরুচীপূর্ণ নাম পরিবর্তন করতে হবে এবং কোন মুসলিম সন্তানের নাম যেন এমন না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। 

ভাল ও মন্দ নামের প্রভাব: 

ইবনু কায়্যিম জাওযিয়া (রহ.) তাঁর কিতাব ‘তুহফাতুল মাওদুদ বি আহকামিল মাওদূদ’ এর মধ্যে লিখেন “নামের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণভাবেই মানুষের ভাল-মন্দ আচরণ, চরিত্র ও কর্মধারা প্রভাবিত হয়। 
রাসূলুল্লাহ (সা.) কে মুহাম্মাদ (চরম প্রশংসিত) ও আহমাদ (অত্যন্ত প্রশংসাকারী) নামে ডাকা হত। বস্তুত চারিত্রিক বৈশিষ্টে তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রশংসায় সর্বোত্তম এবং পৃথিবীর সকলের কাছেই তিনি চরমভাবে প্রশংসিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাই সুন্দর নাম রাখতে বলেছেন, কেননা নামধারী তার নামের কারনে লজ্জাবোধ করে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং নামের অর্থের সাথে সমাঞ্জস্যপূর্ণ কাজে প্রবৃত্ত হয়। 
নামধারীর উপর নামের প্রভাব কত গভীর তা নিম্ন হাদীস থেকে প্রমাণিত। সাইদ ইবনু মুসাইয়্যিদ থেকে বর্ণিত, সে (বর্ণনাকারীর দাদা) বলেন; আমি নাবী (সা.) এর কাছে এলাম; তিনি জিজ্ঞেস করলেন: তোমার নাম কি? আমি বললাম: হাযন (কর্কশ, রুক্ষ, শুষ্ক মাটি)। তিনি বললেন: তুমি সাহল (নরম/কোমল) । সে বলল আমার পিতা যে নাম রেকেছে তা পরিবর্তন করবই না। ইবনু মুসাইয়্যিব বলেন যে, তখন থেকেই আমার বংশের মধ্যে ঐ কর্কশতা, রুক্ষতা বিদ্যমান ছিল। (মিশকাত, হা.৪৫৭২)
এজন্য নাম নির্বাচনে অতি সতর্কতার প্রয়োজন। মানুষ যে নামে অন্যকে ডাকে, সে নামের শুভ-অশুভ অর্থের প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর জীবনে। এ কারণে বলা হয় মানুষের মুখের কথাতেই দুঃখ-দুর্দশা টেনে আনে। 

ইসলামী নামের শ্রেণী বিভাগ:

সংক্ষিপ্ত নাম – সন্তানের বা অন্য কারো নামের পূর্বে পিতা (আবু), উম্মু (মাতা) যোগ না করে এবং পিতা এবং পূর্বপুরুষগণের নামের পূর্বে ইবনু (পুত্র) বা বিনতে (কন্যা) যোগ না করে এক শব্দে বা মিশ্র শব্দে নামকরণই হচ্ছে সংক্ষিপ্ত নাম।

বংশসূচক নাম:

পিতা বা পূর্ব পুরুষেগণের নামের পূর্বে ইবনু (পুত্র) বা বিনতে (কন্যা) সংযোগ করে নামকরণ করাকে বংশসূচক নাম বলে। এ ধরণের নাম করণের ফলে উদ্দেশিত ব্যক্তিকে সনাক্তকরণ সহজ। কারণ এতে ব্যক্তির নামের সাথে পিতা বা পূর্বপুরুষগণেরও নাম সংযুক্ত থাকে।আরবে এ ধরনের নাম করণের প্রচলন বেশী। 

সম্বন্ধসূচক নাম:

বংশ, গোত্র, পেশা, বাসস্থান, জন্মস্থান ইত্যাদির বিশেষণযোগে নামকে সম্বন্ধসূচক নাম বলে। বিশ্বে বহু মুসলিম মনীষী আছেন যারা সম্বন্ধসূচক নামেই বিখ্যাত হয়েছেন। যেমন ইমাম বুখারী (রহ.)। বুখারা হচ্ছে তার জন্মস্থানের নাম।

উপাধি:

কোন ব্যক্তি তাঁর সুমহান কর্মফল, অবদান বা গুণের কারণে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত হয়ে থাকেন। যেমন: উমার (রাযি.) নামের শেষে ফারূক (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী), আবু বাকার (রাযি.) এর নামের শেষে সিদ্দীক (বিশ্বাসী)। 

উপনাম:

সন্তানের নামের পূর্বে তার আবু (পিতা) বা উম্মু (মাতা) যোগ করে ডাকাকে উপনাম বলে। আরবদের মধ্যে উপনামের প্রচলন আছে যেমন, আবুল কাসিম (কাসিমের পিতা) আবু বাকর (বাকার এর পিতা) আবু হুরাইরা ইত্যাদি। উল্লেখ্য বাংলাদেশে উপনাম, উপাধি, সম্বন্ধসূচক ও বংশ সূচক নামের প্রচলন সাধারণত দেখা যায় না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url