হযরত সাঈদ ইবনে আমের জুমাহী ( রাজিঃ) | সাহাবা চরিত
মক্কার অলিগলি ঘুরে আনন্দ মিছিলটি তানঈম প্রান্তরের দিকে এগুচ্ছে। এ আনন্দ মিছিলে অংশ অংশগ্রহণ করেছে মক্কার হাজারো যুব-কিশোর আর পৌঢ়-বৃদ্ধরা। শুধু কি তাই! ঘর-দোর ছেড়ে বেরিয়েে এসেছে অনেক কিশোরী যুবতীও। থেতে থেকে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে লাত উয্যার জয়ধ্বনি। করতালি আর উল্লাস ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে মরুপ্রান্তর।
মিছিলের নেতৃত্বে রয়েছে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ। সবার আগে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলেছে এক শৃঙ্খলিত বন্দীকে। তাঁর নাম খুবাইব । রাসুলের সাহাবী। একান্ত একনিষ্ঠ সহচর। মুশরিকরা বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁকে বিন্দী করেছে। এখন তানঈম প্রান্তরে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁকে শূলে চড়াবে। নির্মমভাবে হত্যা করবে।
সাঈদ ইবনে আমের । মক্কার এক তরুণ যুবক। যৌবনের জোয়ারে টইটম্বুর তাঁর শরীর-মন। অনুসন্ধিৎসু আর জিজ্ঞাসু তাঁর দেহ-অন্তর। দুরন্ত, দুর্বার আর অপ্রতিরোধ্য তার গতি প্রকৃতি। আজকের এই উল্লাস মিছিলে সেও পিছিয়ে নেই। হাজারো যুবকর ভিড়ে সেও চলল মিছিলের সাথে সাথে। অনুসন্ধিৎসু মন তাকে একেবারে শৃঙ্খলিত বন্দীর নকিটে নিয়ে এল। দেখল শৃঙ্খলিত খুবাইবের চেহারায় ভয়-ভীতির কোন ছাপ নেই। নির্বিকার নিশ্চিন্ত এক সুখি মানুষ। যেন প্রশান্তির বন্যা বইছে তার হৃদয় উপত্যকায়। এ দৃশ্যে সাঈদ অত্যন্ত বিস্মিত হল।
আনন্দ মছিলটি ধীরে ধীরে তানঈম প্রান্তরে এস প্যেছল। একেবারে শূলি কাষ্টের গোড়ায় গিয়ে থামল। করতালি আর লাত-উয্যার ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে চির শান্ত তানঈম প্রান্তর মুখরিত হয়ে উঠল। সাঈদ ইবনে আমেরের অনুসন্ধানী দৃষ্টি আবার ফিরে েএল বন্দী খুবাইবের দিকে। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তাঁর নেই কোন ব্যাকুলতা। মৃত্যুর ভয়াল বিভীষিকার আতঙ্কে নেই কোন বিষন্নতা। যেন তিনি এক আজব ভুবনের মানুষ ।
ইতিমধ্যে শোরগোল আর অট্টহাসির মাঝে খুবাইবের ধীরস্থির প্রশান্ত কন্ঠস্বর শুনতে পেল। কুরাইশ নেতৃবৃন্দকে বলছে, মৃত্যুর পূর্বে
আপনারা কি আমাকে দু’রাকাত নামায আদায় করতে দেবেন? তারপর খুবাইব মুশরিকদের নিশ্ছিদ্র বেষ্টনীর মাঝে দাঁড়িয়ে দু’রাকাত নামায পড়লেন। এতো নামায নয় এ যেন আল্লাহর প্রেম-প্রীতি ারি ভালবাসার এক অনুপম দৃশ্য। মূহুর্তে আত্মসত্ত্বা ভুলে তিনি যেন চলে গেলেন সুদূর কোন অদৃশ্যলোকে। যেন গোপন অভিসারে নিরব নির্জন স্থানে প্রেমাস্পদের কানে কানে মিটিমিটি কথা বলছেন। তারপর জীবনের সকল সঞ্চিত প্রেম ও ভালবাসা উজাড় করে মহান রাব্বুল আলামীনের পদতলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ছেন। খুবাইবের এ বিস্ময়কর নামাজ কাফেরদের চিন্তা-চেতনায় এক প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করল। কপালের রেখায় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন তীব্র আকারে ফুটে উঠল। আহ! কি সুন্দর নামাজ! কী চমৎকার প্রভূ ভক্তি! নিরাকার রবের সামনে কি এমনভাবে আত্মভোলা হওয়া যায়? জীবনের অন্তিম মুহুর্তে কি নামাজেকে শেষ আকাঙ্খা হিসাবে গ্রহণ করা যায়? এমন বহু প্রশ্নে জর্জরিত হচ্ছে তাদের বিবেক-বুদ্ধি।
ইতিমধ্যে দু’রাকাত নামাজ শেষ করলেন খুবাইব (রাজিঃ)। ফিরে তাকালেন কুরাইশ নেতৃবৃন্দের দিকে। বললেন, তোমাদের যদি এ ধারনা না হত যে, মৃত্যুর ভয়ে আমি নামাজ দীর্ঘ
করছি, তাহলে আমি আমার নামাজকে আরো দীর্ঘ করতাম। এরপর সাঈদ ইবনে আমের দেখল, মুশরিকরা তার এক একটি অঙ্গ নির্মমভাবে কেটে নিচ্ছে আর প্রশ্ন করছে, খুবাইব! তুমি কি চাও, মুহাম্মদ তোমার স্থানে হবে আর তুমি চির মুক্তি পাবে? রক্তাক্ত খুবাইবের অত্যন্ত দৃঢ়, অবিচল প্রতিবাদি কন্ঠ শুনতে পেল সাঈদ ইবনে আমের । তিনি বললেন, নিরাপদে আমি পরিবারের নিকট ফিরে যাব আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়ে একটি মাত্র কাঁটা বিধঁবে তাও আমি বরদাশত করবনা। সাথে সাথে কাফেরদের চিৎকার আর অট্টহাসিতে মুখরিত হয়ে উঠল তানঈম প্রান্তর। তারা বলছে , হত্যকর এই সাবীকে। এই ধর্ম.ত্যাগীকে। এক্ষুনি তাকে শূলিতে দে!
এরপর সাঈদ ইবনে আমের দেখল, শূলিবিদ্ধ খুবাইবের দৃষ্টি আকাশের নীলিমায় আটকে গেছে। অত্যন্ত দৃঢ় কন্ঠে বলছেন, হে আল্লাহ ! এদের সংখ্যা গুণে নিন। নিমম ভাবে এদের হত্যা করুন। এদের কাউকে পরিত্রান দেবেন না। তারপর অগনিত বর্ষা আর তরবারীর আঘাতে জর্জরিত ছিন্নভিন্ন দেহ থেকে খুবাইবের প্রাণপাখি নীল আকাশের নিঃসীম নীলিমায় উড়ে গেল। কাফেরদের বেষ্টনীর মাঝে পড়ে রইল তাঁর নিষ্প্রাণ নর্জিীব দেহটি।
আনন্দ মছিলটি ধীরে ধীরে তানঈম প্রান্তরে এস প্যেছল। একেবারে শূলি কাষ্টের গোড়ায় গিয়ে থামল। করতালি আর লাত-উয্যার ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে চির শান্ত তানঈম প্রান্তর মুখরিত হয়ে উঠল। সাঈদ ইবনে আমেরের অনুসন্ধানী দৃষ্টি আবার ফিরে েএল বন্দী খুবাইবের দিকে। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তাঁর নেই কোন ব্যাকুলতা। মৃত্যুর ভয়াল বিভীষিকার আতঙ্কে নেই কোন বিষন্নতা। যেন তিনি এক আজব ভুবনের মানুষ ।
ইতিমধ্যে শোরগোল আর অট্টহাসির মাঝে খুবাইবের ধীরস্থির প্রশান্ত কন্ঠস্বর শুনতে পেল। কুরাইশ নেতৃবৃন্দকে বলছে, মৃত্যুর পূর্বে
আপনারা কি আমাকে দু’রাকাত নামায আদায় করতে দেবেন? তারপর খুবাইব মুশরিকদের নিশ্ছিদ্র বেষ্টনীর মাঝে দাঁড়িয়ে দু’রাকাত নামায পড়লেন। এতো নামায নয় এ যেন আল্লাহর প্রেম-প্রীতি ারি ভালবাসার এক অনুপম দৃশ্য। মূহুর্তে আত্মসত্ত্বা ভুলে তিনি যেন চলে গেলেন সুদূর কোন অদৃশ্যলোকে। যেন গোপন অভিসারে নিরব নির্জন স্থানে প্রেমাস্পদের কানে কানে মিটিমিটি কথা বলছেন। তারপর জীবনের সকল সঞ্চিত প্রেম ও ভালবাসা উজাড় করে মহান রাব্বুল আলামীনের পদতলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ছেন। খুবাইবের এ বিস্ময়কর নামাজ কাফেরদের চিন্তা-চেতনায় এক প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করল। কপালের রেখায় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন তীব্র আকারে ফুটে উঠল। আহ! কি সুন্দর নামাজ! কী চমৎকার প্রভূ ভক্তি! নিরাকার রবের সামনে কি এমনভাবে আত্মভোলা হওয়া যায়? জীবনের অন্তিম মুহুর্তে কি নামাজেকে শেষ আকাঙ্খা হিসাবে গ্রহণ করা যায়? এমন বহু প্রশ্নে জর্জরিত হচ্ছে তাদের বিবেক-বুদ্ধি।
ইতিমধ্যে দু’রাকাত নামাজ শেষ করলেন খুবাইব (রাজিঃ)। ফিরে তাকালেন কুরাইশ নেতৃবৃন্দের দিকে। বললেন, তোমাদের যদি এ ধারনা না হত যে, মৃত্যুর ভয়ে আমি নামাজ দীর্ঘ
করছি, তাহলে আমি আমার নামাজকে আরো দীর্ঘ করতাম। এরপর সাঈদ ইবনে আমের দেখল, মুশরিকরা তার এক একটি অঙ্গ নির্মমভাবে কেটে নিচ্ছে আর প্রশ্ন করছে, খুবাইব! তুমি কি চাও, মুহাম্মদ তোমার স্থানে হবে আর তুমি চির মুক্তি পাবে? রক্তাক্ত খুবাইবের অত্যন্ত দৃঢ়, অবিচল প্রতিবাদি কন্ঠ শুনতে পেল সাঈদ ইবনে আমের । তিনি বললেন, নিরাপদে আমি পরিবারের নিকট ফিরে যাব আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়ে একটি মাত্র কাঁটা বিধঁবে তাও আমি বরদাশত করবনা। সাথে সাথে কাফেরদের চিৎকার আর অট্টহাসিতে মুখরিত হয়ে উঠল তানঈম প্রান্তর। তারা বলছে , হত্যকর এই সাবীকে। এই ধর্ম.ত্যাগীকে। এক্ষুনি তাকে শূলিতে দে!
এরপর সাঈদ ইবনে আমের দেখল, শূলিবিদ্ধ খুবাইবের দৃষ্টি আকাশের নীলিমায় আটকে গেছে। অত্যন্ত দৃঢ় কন্ঠে বলছেন, হে আল্লাহ ! এদের সংখ্যা গুণে নিন। নিমম ভাবে এদের হত্যা করুন। এদের কাউকে পরিত্রান দেবেন না। তারপর অগনিত বর্ষা আর তরবারীর আঘাতে জর্জরিত ছিন্নভিন্ন দেহ থেকে খুবাইবের প্রাণপাখি নীল আকাশের নিঃসীম নীলিমায় উড়ে গেল। কাফেরদের বেষ্টনীর মাঝে পড়ে রইল তাঁর নিষ্প্রাণ নর্জিীব দেহটি।
***
খুবাইবের শাহাদাতের পর বধ্যভূমি থেকে সবাই ফিরে এল। জনশূন্য হয়ে পড়ল তানঈম প্রান্তর। জীবন যাত্রাপথের বহু ঘটনা দুর্ঘটনার আবর্তে সবাই ভুলে গেল খুবাইব রাজিঃ এর শাহাদাতের বিস্ময়কর ঘটনা।
কিন্তু সাঈদ ইবনে আমের ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। মুহুর্তের জন্যও তাঁর অন্তর থেকে খুবাইব রাজিঃএর শাহাদাতের বিস্ময়কর ঘটনাগুলো মুছে যায়নি। দিবাশেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই ঘুমের ঘোরে তাঁকে স্বপ্নে দেখেন। ভয়ে-আতঙ্কে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আবার দিবালোকে কল্পনার জগতে এসে খুবাইব রাযিঃ হাজির হন। শূলিকাষ্ঠের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ধীরস্থির শান্তচিত্তে দু’রাকাত নামায আদায়ের প্রাণবন্ত চিত্র ভেসে উঠেতাঁর মানসপটে। একেকটি দৃশ্যের পর সর্বশেষে যখন কুরােইশের উপর বদ দু’আর শব্দগুলো আ*র কর্ণকুহরে গুঞ্জন তুলে, এই বুঝি আকাশ থেকে মক্কায় ভয়াবহ বজ্রপাত নেমে আসবে। এক্ষুণি বুঝি আকাশ থেকে বিশাল প্রস্তর খন্ড পড়ে মক্কানগরী ধূলিস্মাৎ হয়ে যাবে। খুবাইব (রাযিঃ) এর এই ঘটনা সাঈদ ইবনে আমের এর অন্তরে আলোর বন্যা বইয়ে দিল। তার চিন্তা জগতে এক বিরাট বিপ্লব সৃষ্টি করল। তত্বজ্ঞানের এক অফুরন্ত ভান্ডারে ভরে গেল তার হৃদয়-মন।
সে বুঝে ফেলল হৃদয়ের গভিরে যে ঈমানের শাখা প্রশাখা পৌছে যায়, তা বহু বিস্ময়কর কাহিনী সৃষ্টি করে। বহু অলৌকিক ঘটনার জন্ম দেয়।
আরো বুঝল, যে মহান ব্যক্তিকে তাঁর সহচরবৃন্দ ও সঙ্গী-সাথীরা এমনি ভাবে হৃদয় দিয়ে ভালবাসতে পারে। নিঃসন্দেহে তিনি উর্ধ্বলোকের মদদপুষ্ট মহান কোন নবী বৈ আর কিছু নয়। এরপর আল্লাহ তায়ালা সাঈদ ইবনে আমের এর রুদ্ধ হৃদয় ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। সমবেত কাফেরদের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলেন। কুরাইশের পৌত্তলিক পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে মুক্ত করলেন। সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) নিজেকে আর মক্কায় ধরে রাখতে পারলেননা। রাসূলের ভালবাসা মহব্বত তাঁকে মদিনার দিকে তীব্র আকর্ষণ করতে লাগল। অবশেষে ব্যাকুল অস্থির চিত্তে তিনি মদিনায় হিজরত করলেন। সারাক্ষণ রাসূলের আশেপাশে থাকেন। রাসূলের মজলিসে বসেন। ইহলৌকিক পারলৌকিক কথা শুনেন। দিনে দিনে তিনি ঈমানী বলে আরো বলিয়ান হয়ে উঠলেন। খায়বর তৎপরবর্তী সকল জেহাদে তিনি রাসূলের পাশে পাশে থেকে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। ইন্তেকালের পর তিনি পর্যায়ক্রমে খলীফা আবুবকর (রাযিঃ) ও খলীফা ওমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) এর হাতে উন্মুক্ত তরবারী হয়ে যান। ইসলামের সেবায় তিনি তাদের সকল হুকুম অবলীলাক্রমে মেনে নেন। তিনি এখন প্রকৃত মুমিনের এক অনন্য উপমা। দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাত ক্রয়ের পাকা সওদাগর। আল্লাহর রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি অর্জনে এক কামেল মুমিন। খলিফাদ্বয় তাঁর সততা, আল্লাহভীরুতা, তাকওয়া-পরহেযগারী সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন। তাই তাঁরা তাঁর উপদেশ ও দিক নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে শুনতেন।
একদিনের ঘটনা। হযরত ওমর (রাযিঃ) তখন সবেমাত্র খলিফা হয়েছেন। তখন সাঈদ ইবনে ‘আমের (রাযিঃ) তার নিকট গেলেন। তারপর বললেন, শোন ওমর! তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি । জনসাধারণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। আল্লাহর ব্যাপারে কোউকে ভয় করবেনা। মনে রাখবে, তোমার কথা যেন কাজের খেলাফ না হয়। কারণ প্রকৃত ও শ্রেষ্ঠ কথা তাই, বাস্তবায়ন যাকে সত্যায়িত ও বলিষ্ঠ করে। শোন ওমর ! দূর ও নিকটের মূসলমানদের প্রতি তোমার দৃষ্টিকে সবদ্র সজাগ রখবে। তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য যা ভালবাস, জনসাধারণের জন্য তা-ই ভালবাসবে। আর যা তোমার ও তোমার পরিবারের অপছন্দ করবে তা জনসাধারণের জন্যও অপছন্দ করবে। সত্য বাস্তবায়নে জীবন-যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়। আল্লাহর বিধি-বিধান বাস্তবায়নে কারো তিরস্কারকে ভয় করোনা ।
হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) তখন বললেন হে সাঈদ! বল তো কে এমন করতে পারবে?
সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) বললেন, আপনাকে এবং আপনার মত যাদেরকে আল্লাহ তা‘য়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামমের উম্মতের শাসক বানিয়েছেন, তারাই তা পারবে।
কিন্তু সাঈদ ইবনে আমের ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। মুহুর্তের জন্যও তাঁর অন্তর থেকে খুবাইব রাজিঃএর শাহাদাতের বিস্ময়কর ঘটনাগুলো মুছে যায়নি। দিবাশেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই ঘুমের ঘোরে তাঁকে স্বপ্নে দেখেন। ভয়ে-আতঙ্কে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আবার দিবালোকে কল্পনার জগতে এসে খুবাইব রাযিঃ হাজির হন। শূলিকাষ্ঠের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ধীরস্থির শান্তচিত্তে দু’রাকাত নামায আদায়ের প্রাণবন্ত চিত্র ভেসে উঠেতাঁর মানসপটে। একেকটি দৃশ্যের পর সর্বশেষে যখন কুরােইশের উপর বদ দু’আর শব্দগুলো আ*র কর্ণকুহরে গুঞ্জন তুলে, এই বুঝি আকাশ থেকে মক্কায় ভয়াবহ বজ্রপাত নেমে আসবে। এক্ষুণি বুঝি আকাশ থেকে বিশাল প্রস্তর খন্ড পড়ে মক্কানগরী ধূলিস্মাৎ হয়ে যাবে। খুবাইব (রাযিঃ) এর এই ঘটনা সাঈদ ইবনে আমের এর অন্তরে আলোর বন্যা বইয়ে দিল। তার চিন্তা জগতে এক বিরাট বিপ্লব সৃষ্টি করল। তত্বজ্ঞানের এক অফুরন্ত ভান্ডারে ভরে গেল তার হৃদয়-মন।
সে বুঝে ফেলল হৃদয়ের গভিরে যে ঈমানের শাখা প্রশাখা পৌছে যায়, তা বহু বিস্ময়কর কাহিনী সৃষ্টি করে। বহু অলৌকিক ঘটনার জন্ম দেয়।
আরো বুঝল, যে মহান ব্যক্তিকে তাঁর সহচরবৃন্দ ও সঙ্গী-সাথীরা এমনি ভাবে হৃদয় দিয়ে ভালবাসতে পারে। নিঃসন্দেহে তিনি উর্ধ্বলোকের মদদপুষ্ট মহান কোন নবী বৈ আর কিছু নয়। এরপর আল্লাহ তায়ালা সাঈদ ইবনে আমের এর রুদ্ধ হৃদয় ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। সমবেত কাফেরদের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলেন। কুরাইশের পৌত্তলিক পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে মুক্ত করলেন। সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) নিজেকে আর মক্কায় ধরে রাখতে পারলেননা। রাসূলের ভালবাসা মহব্বত তাঁকে মদিনার দিকে তীব্র আকর্ষণ করতে লাগল। অবশেষে ব্যাকুল অস্থির চিত্তে তিনি মদিনায় হিজরত করলেন। সারাক্ষণ রাসূলের আশেপাশে থাকেন। রাসূলের মজলিসে বসেন। ইহলৌকিক পারলৌকিক কথা শুনেন। দিনে দিনে তিনি ঈমানী বলে আরো বলিয়ান হয়ে উঠলেন। খায়বর তৎপরবর্তী সকল জেহাদে তিনি রাসূলের পাশে পাশে থেকে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। ইন্তেকালের পর তিনি পর্যায়ক্রমে খলীফা আবুবকর (রাযিঃ) ও খলীফা ওমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) এর হাতে উন্মুক্ত তরবারী হয়ে যান। ইসলামের সেবায় তিনি তাদের সকল হুকুম অবলীলাক্রমে মেনে নেন। তিনি এখন প্রকৃত মুমিনের এক অনন্য উপমা। দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাত ক্রয়ের পাকা সওদাগর। আল্লাহর রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি অর্জনে এক কামেল মুমিন। খলিফাদ্বয় তাঁর সততা, আল্লাহভীরুতা, তাকওয়া-পরহেযগারী সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন। তাই তাঁরা তাঁর উপদেশ ও দিক নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে শুনতেন।
একদিনের ঘটনা। হযরত ওমর (রাযিঃ) তখন সবেমাত্র খলিফা হয়েছেন। তখন সাঈদ ইবনে ‘আমের (রাযিঃ) তার নিকট গেলেন। তারপর বললেন, শোন ওমর! তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি । জনসাধারণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। আল্লাহর ব্যাপারে কোউকে ভয় করবেনা। মনে রাখবে, তোমার কথা যেন কাজের খেলাফ না হয়। কারণ প্রকৃত ও শ্রেষ্ঠ কথা তাই, বাস্তবায়ন যাকে সত্যায়িত ও বলিষ্ঠ করে। শোন ওমর ! দূর ও নিকটের মূসলমানদের প্রতি তোমার দৃষ্টিকে সবদ্র সজাগ রখবে। তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য যা ভালবাস, জনসাধারণের জন্য তা-ই ভালবাসবে। আর যা তোমার ও তোমার পরিবারের অপছন্দ করবে তা জনসাধারণের জন্যও অপছন্দ করবে। সত্য বাস্তবায়নে জীবন-যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়। আল্লাহর বিধি-বিধান বাস্তবায়নে কারো তিরস্কারকে ভয় করোনা ।
হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) তখন বললেন হে সাঈদ! বল তো কে এমন করতে পারবে?
সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) বললেন, আপনাকে এবং আপনার মত যাদেরকে আল্লাহ তা‘য়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামমের উম্মতের শাসক বানিয়েছেন, তারাই তা পারবে।
***
এবার হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেলেন। সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) কে খেলাফতের কাজে সহায়তা করার আহবান জানালেন। বললেন শোন সাঈদ! আমি তোমাকে হিমসের গভর্ণর বানিয়ে পাঠাচ্ছি।
ভয় পাওয়া লোকের মত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) বললেন, ভাই ওমর! আল্লাহর কসম করে বলছি, তুমি আমাকে পরীক্ষায় ফেলো না।
হযরত ওমর (রাযিঃ) এবার একটু ক্রদ্ধ হলেন। ছি, ছি, এটা কেমন কথা! আমার মাথায় দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে তোমরা দূরে সরে থাকবে? আল্লাহর সপথ! আমি এবার তোমাকে ছাড়ছিনা। তারপর তিনি তাঁকে হিম্স নগরীর গভর্ণর বানিয়ে দিলেন এবংজিজ্ঞেস করলেন, ভাই সাঈদ! বাইতুল মাল থেকে কি তোমার ভাতার ব্যবস্থা করে দিব?
সাঈদ ইবনে আমের বললেন, না, কোন প্রয়োজন নেই। দিলে তা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হবে। তারপর তিনি হিমস্ নগরীতে চলে গেলেন।
এর কিছুদিন পর হিমস্ নগরী থেকে একটি প্রতিনিধি দল মদীনায় এল। এরা আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর (রাযিঃ) এর পরিচিত ও বিশ্বস্ত।
হযরত ওমর (রাযিঃ) তাদের বললেন, তোমরা আমাকে হিমসের দরিদ্র লোকদের একটি তালিকা তৈরী করে দাও। আমি তাদের অভাব পূরনের চেষ্টা করব।
প্রতিনিধিদল একটি তালিকা তৈরী করে আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর (রাযিঃ) এর নিকট পেশ করলেন। তিনি তালিকাটি নিয়ে চোখ বুলাতে লাগলেন। কয়েকটি নামের পরই তাঁর দৃষ্টি আটকে একেবারে স্থির হয়ে গেল একটি নামের উপর। নামটি হল সাঈদ ইবনে আমের। এক আকাশ বিস্ময় তার কন্ঠে বাঙ্ময় হয়ে উঠল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে এই সাঈদ ঈবনে আমের? প্রতিনিধিদল বলল, ইনি আমাদের গভর্ণর। আমাদের আমীর। হযরত ওমর (রাযিঃ) এর বিষ্ময় এবার বহুগুন বেড়ে গেল। বললেন, তোমাদের আমীরও কি দরিদ্র? !
প্রতিনিধি বলল, আল্লাহর কসম করে বলছি, কখনো এমন হয় যে, দিনের পর দিন তাঁর ঘরে আগুন পর্যন্ত জ্বলে না।
হযরত ওমর (রাযিঃ) এবার অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলেন। অশ্রুধারায় তার দুচোখ সিক্ত হয়ে গেল। তারপর এক হাযার দিনারের একটি থলে তাদের হাতে দিয়ে বললেন, সাঈদ ইবনে আমেরের নিকট আমার সালাম পৌছাবে। তাঁকে বলবে ওমর ইবনে খাত্তাব এগুলো আপনাকে আপনার প্রয়োজন পূরণের জন্য দিয়েছেন।
প্রতিনিধি বলল, আল্লাহর কসম করে বলছি, কখনো এমন হয় যে, দিনের পর দিন তাঁর ঘরে আগুন পর্যন্ত জ্বলে না।
হযরত ওমর (রাযিঃ) এবার অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলেন। অশ্রুধারায় তার দুচোখ সিক্ত হয়ে গেল। তারপর এক হাযার দিনারের একটি থলে তাদের হাতে দিয়ে বললেন, সাঈদ ইবনে আমেরের নিকট আমার সালাম পৌছাবে। তাঁকে বলবে ওমর ইবনে খাত্তাব এগুলো আপনাকে আপনার প্রয়োজন পূরণের জন্য দিয়েছেন।
*****
হিমসে পৌঁছে প্রতিনিধিদল সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) এর বাড়ীতে এল। থেলেটি তাঁর হাতে তুলে দিয়ে আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) এর সালাম পৌঁছালেন ও তাঁর সংবাদটি দিলেন।
সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) থলেটি খুলেই বিস্ফরিত নেত্রে তাকিয়ে রইলেন। দেখলেন ঝকঝকে দীনারে তা ঠাসা। তিনি তা দূরে সরিয়ে দিতে দিতে অত্যন্ত বিস্ময় ভরা কন্ঠে বললেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) এর ভয়ার্ত কন্ঠস্বর শুনে তাঁর স্ত্রী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। ব্যস্ততায় ভরা কন্ঠে বললেন, কি হল,!! কী হয়েছে !!! আমীরুল মুমিনীন কি তাহলে ইন্তেকাল করেছেন?!
সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) বললেন, না, বরং তার চেয়ে বেশী ভয়াবহ।
স্ত্রী বললেন, বলো না তাহলে হয়েছে কী ? ! সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) ব্যাকুল কন্ঠে বললেন, আমার আখেরাতকে ধ্বংস করার জন্য দুনিয়া আমার উপর চেপে বসেছে আর ফিতনা আমার ঘরে এসে উপস্থিত হয়েছে।
স্ত্রী দীনার সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তাই পর্দার আড়াল থেকেই বললেন, ফিতনাকে দূরে সরিয়ে দিন। নিজে তা থেকে বেঁচে থাকুন।
সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) বললেন, তুমি কি এ ব্যাপারে আমাকে সহযোগীতা করবে? স্ত্রী বললেন, হাঁ, অবশ্যই করব।
তারপর সাঈদ ইবনে আমের (রাযিঃ) দীনারগুলো ভাগ করে অনেকগুলো থলেতে ভরলেন এবং হিমসের দরিদ্র মুসলমানদের মাঝে তা বন্টন করে দিলেন।
****